চাঁদপুরের হতদরিদ্র সিরাজ ছৈয়াল (৫৫) নিজ গ্রামে ভ্যান গাড়িতে তরিতরকারি বিক্রি করতেন। এর উপার্যিত অর্থে কোনোরকম চলতো স্ত্রী ও ৫ সন্তানের সংসার। ৪ মেয়ের মধ্যে দুইজনের বিয়ে হয়েছে। ১৭ বছর বয়সে ৩য় মেয়ে আকলিমা সংসারের চাকাটা আরেকটু সচল রাখতে গেলো দুই মাস আগে ঢাকায় গিয়েছিলো গার্মেন্টসকর্মী হয়ে।
সম্প্রতি মেয়েকে দেখেশুনে রাখতে সিরাজ ছৈয়ালও পা রাখেন ঢাকার মাটিতে। বাপ-মেয়ে বুদ্ধি করে অবসর সময়ে সিরাজ ছৈয়াল ঢাকার মহল্লাতে ভ্যানে করে তরকারির ব্যবসা শুরু করেন।
এতে মেয়েকে দেখে রাখার পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ও হবে। যা দিয়ে সংসারের খরচ যোগান দেবার পাশাপাশি একমাত্র ছেলেটাকে বিদেশ পাঠাতে গিয়ে মাথায় নেয়া ঋণের বোঝাও কিছুটা কমাতে পারবে। এতে করে দারিদ্রতাকে জয় করে জীবনকে জড়িয়ে নিবে সুখের চাদরে।
কিন্তু কে জানতো, ভাগ্যবিধাতা তাদের গল্পটি অন্যভাবে লিখে রেখেছেন! আর তাইতো, সুখি জীবনের স্বপ্নচোখে ঢাকায় গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে এলো হতভাগা এই বাবা ও মেয়ে।
২৭ অক্টোবর রোববার রাজধানীর ঢাকার আদাবরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় এই বাবা ও মেয়ে। মেয়েকে সাথে নিয়ে কাওরানবাজার থেকে তরকারি আনতে গিয়ে আদাবর থানার শ্যামলী সড়ক ও জনপথ অফিস সংলগ্ন রাস্তা পার হতে ট্রাকের চাপায় দু’জনে পৃষ্ঠ হন। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে আদাবর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয় হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নিহতরা চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯নং বালিয়া ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বালিয়া গ্রামের বাসীন্দা।
২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার বাদ আছর জানাযা শেষে নিহতদের চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। এর আগে পিতা ও মেয়ের জোড়া লাশ দেখে তাদের গ্রামের বাড়িতে এক হ্নদয় বিদায়ক দৃশ্যে তৈরি হয়।
নিহত বাবা ও মেয়েকে একনজর দেখার জন্য বালিয়ার ছৈয়াল বাড়িতে ভিড় করেন শত শত মানুষ।
প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম, ২৯ অক্টোবর ২০১৯