শীর্ষ সংবাদ

হঠাৎ বৃষ্টিতে এবারও চাঁদপুরের আলু চাষিদের মাথায় হাত

ফাল্পুনের মাঝামাঝি সময়ে অতিবৃষ্টির মাধ্যমে দুর্যোগ আগমনে মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন চাঁদপুরের কৃষকরা। হতাশায় হাজারো কৃষক। নিভে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। বৃষ্টি ও জমিতে জমে থাকা পানির কারণে মাঠে নেমে কাজ করতে না পারায় বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক কৃষানীরা।

অসময়ের বৃষ্টির কারণে গত দুই বছর যাবৎ আলু চাষ করে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাঁদপুরের কৃষকরা। দাম না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এবছরও গত দু’দিনে অতি বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে বহু এলাকায় আলুর পাশাপাশি বহুজাতিক করলা, ধুন্দল, বরবটি, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

এবছর কৃষকরা যখন আর কিছুদিনের মধ্যে আলু ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই বৃষ্টি হানা দেয়। ২ দিনের বৃষ্টিতে ফসলি মাঠে বিশেষ করে আলুর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

কৃষকরা যখন হাসি মুখে তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও গত সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি হানা দেয়। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন কয়ে বলে আসেনা তবুও প্রতিনিয়ত প্রতি বছরই ছাড় পাচ্ছেন না চাঁদপুরের আলুসহ অন্যান্য চাষীরা। প্রতি বছরই ঝড় বৃষ্টির আতঙ্কের পাশাপাশি লাভের আশার কৃষকরা চাষাবাদ করে গোলআলু। এবারের আবহাওয়া বাম্পার ফলন উৎপাদন উপযোগী হওয়ায় আলু চাষীরা বেশ স্বস্তিতে ছিলেন।

মঙ্গলবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা কোথাও জমির পানি অপসারণ করছেন আবার কোথাও পানির মধ্যে থেকেই আলু তুলছেন। এ চিত্র ছিল সর্বত্র। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলনও হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি তাদের সর্বনাশ ডেকে আনল।

কৃষকদের অভিযোগ প্রতিবছর আলুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হলেও সরকার এগিয়ে আসছে না।

এ ব্যাপারে চাদঁপুর সদর উপজেলার কুমারডুগী এলাকার কয়েকজন কৃষক জানান, গত কয়েক বছর আলু চাষ করে অনেক লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। এবার বাম্পার ফলন দেখে বেশ খুশিতেই ছিলেন। কিন্তু ফাল্গুনের এই দুর্যোগে হতাশ তারা।

এক কৃষক জানান, গত বছর তিনি কোল্ডস্টোরে লাভের আশার কিছু আলু রেখেছেন। কিন্তু দাম কম থাকায় কোল্ডস্টোর থেকে সেই আলু আর আনেননি। এমন হতাশা চাঁদপুরের বহু আলু চাষির।

আরেকজন কৃষক জানান, গত বছর তিনি হিমাগারে লাভের আশার কিছু আলু রেখেছেন কিন্তু দাম কম থাকায় হিমাগার থেকে তিনি আলু আনেন নি। এর পাশাপাশি করলা, দুন্দুল, ভটবটি, ছিছিঙ্গাসহ বহু মৌসুমী ফসলের গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকা এবং মাটি কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়ায় এসব সবজির গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্খা খুব বেশী বলে উল্লেখ করেন কয়েকজন কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতি বৃষ্টিতে আলু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও দাম না পাওয়ায় গত ২ বছর কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যার কারণে এ বছর আলুর আবাদ কম হয়েছে। জেলায় এবার ৮ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আলুর ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু গত ২ দিনের বৃষ্টিতে এবারও কৃষকরা ক্ষতির শিকার হলেন।

এমন হতাশা চাঁদপুরের অসংখ্য কৃষকের মধ্যে। প্রতিনিয়ত এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসায় লোকসানের ভয়ে এখন অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে সরে আসছেন। এতে করে সবজির দাম হবে চড়া। বিপাকে পড়বে সাধারন ক্রেতারা।

অন্যদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত ২দিনের ন্যায় বুধ ও বৃহষ্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সাথে কোথাও-কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

বার্তা কক্ষ
২৭ ফেব্রুয়ারি,২০১৯

Share