শেষ হয়ে গেলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে আ.লীগের প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পায়। উপজেলার ১১৮টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১১৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী থেকে এগিয়ে থেকে এই জয় লাভ করে।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয় পায় আ.লীগ। পরবর্তীতে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয় আ.লীগের প্রার্থী।
এমনকি সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টিতে আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয় লাভ করে। তার ধারাবাহিকতায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে জয় পায় আ.লীগের সমর্থিত প্রার্থীরা। নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থীদের ইতিবাচক ফলাফলের কারণে আ’লীগের নেতাদের নজর এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে সম্ভাব্য প্রার্থীরা উর্ধ্বতন নেতাদের আর্শিবাদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে প্রার্থী হিসেবে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির চিত্র একেবারেই ভিন্ন। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতারা নিরব।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিশাল কর্মজজ্ঞ শেষ করেই এবার প্রায় ৫০০ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে (ইসি)। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে উক্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হবে আগামী ৩০ মার্চ । একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সর্বমোট ভোটর সংখ্যা ৩ লাখ ৯ হাজার ১৪।
সরেজমিনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আ.লীগের সম্ভাব্য প্রর্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে আগ্রহ কম।
এর কারণ হিসেবে রয়েছে গত ১০ বছরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের নেতিবাচক ফলাফল। যদিও নেতারা বিএনপি প্রার্থীদের এই পরাজয়ের পেছনে সরকারি দলের বিভিন্ন অনিয়ম ও কারচুপির কথা বলছেন।
আ.লীগ-বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৯০ ভাগই সাবেক ছাত্রনেতা। তারা কেউ ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। অনেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। উভয় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বক্তব্য দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তারা চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী হতে চান।
চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার, জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী, জেলা আ.লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কাসেম কন্ট্রাকটার, সাবেক এমপি মরহুম রাজা মিয়ার পুত্র ও আ.লীগ নেতা আমির আজম রেজা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান রানা, জেলা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান মিটু, জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম রিপন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন রিপন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খাজে আহম্মদ মজুমদার ও পৌরসভা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাছান সাউদ।
অপরদিকে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফ মোহাম্মদ ইউনুছ, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান দুলাল।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফ মুহম্মদ ইউনুছ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
প্রার্থী হওয়া সর্ম্পকে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন ‘বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবো।’ ‘বিএনপির সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চাই’।
এদিকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা সর্ম্পকে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আ’ লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবো। দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে পুন:রায় প্রার্থী হবো।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম কন্ট্রাকটার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন নিয়ে পূর্বে একবার প্রার্থী হয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এজন্য তিনি আ’লীগের নেতা-কর্মীসহ সকল পর্যায়ের জনসাধারণের সমর্থন কামনা করেছেন।
অপরদিকে আ.লীগের আরেক প্রার্থী সাবেক এমপি মরহুম রাজা মিয়ার পুত্র ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আমির আজম রেজা। যিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। প্রচার-প্রচারনায় তিনি সকল প্রার্থীর থেকে এগিয়ে ছিলেন। মনোনয়নের অন্যতম দাবীদারও ছিলেন আমির আজম রেজা।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন সর্ম্পকে আমির আজম রেজা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। দল থেকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয় আমি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী হবো।’
এদিকে উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান রানা। যিনি উপজেলা ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া সর্ম্পকে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করি। দলীয় সমর্থন নিয়ে ২০১৪ সালে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে জামাত-বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে জয় লাভ করি। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি জনগণের পাশে থেকে কাজ করতে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের কাজের কোন অনিয়ম না হয় এবিষয়ে আমি সব সময় সোচ্চার ছিলাম। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চাই।’
উপজেলা আ’লীগের সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান মিটু। চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট প্রার্থীকে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ছাত্রজীবনে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার পিতা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগী মরহুম সিরাজুল ইসলাম বিএড ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক হিসেবে মশিউর রহমান মিটু সর্বমহলে সু-পরিচিত। তিনিও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন।
অপরদিকে জেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম এ্যাড. সিরাজুল ইসলামের ভাতিজা সাইফুল ইসলাম রিপন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে যিনি সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেছিলেন।
এছাড়া তিনি ফরিদগঞ্জ পৌর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিক কাজের জন্য তিনি ব্যাপক সমাদৃত। বিশেষ করে জেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত বরাদ্ধ সঠিতভাবে বন্টন করে যেমন- মসজিদ-মন্দির, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, গভীর নলকূপ স্থাপন, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দুস্থ নারীদের সেলাই মেশিন বিতরণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
সাইফুল ইসলাম রিপন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে আ’লীগের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান ভাইয়ের নির্দেশে ফরিদগঞ্জে আ’লীগকে সু-সংগঠিত করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এড. জাহিদুল ইসলাম রোমান।’
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া সর্ম্পকে জেলা পরিষদের এই সদস্য চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘জেলা পরিষদে বরাদ্ধকম থাকায় জনগণকে আশানুরুপ সেবা দিতে পারছি না। জনপ্রতিনিধি হিসেবে মাত্র ৬টি ইউনিয়নের জনগণের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি। যদি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পারি তাহলে সমগ্র উপজেলাবাসীর সেবা করার সুযোগ পাবো।
তিনি জানান, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার ভূমিকা কেমন সেই বিষয়টি জনগণ ভালো করে জানে। আমার লক্ষ্য হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সৈনিক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মানে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা।’
চেয়রাম্যান পদে আরেক তরুণ প্রার্থী ফরিদগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. কামরুল হাছান সাউদ। স্বজ্জন মানুষ হিসেবে সাবেক এই ছাত্রনেতার বিশেষ পরিচিতি রয়েছে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া সর্ম্পকে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আমি সকলের দোয়া ও সমর্থন করছি।’
প্রতিবেদক: আতাউর রহমান সোহাগ
৬ জানুয়ারি, ২০১৯