Home / শীর্ষ সংবাদ / ফরিদগঞ্জে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর বেহাল দশা : কাগজে-কলমে চিকিৎসক থাকলেও বাস্তবে নেই
faridganj-health-complex

ফরিদগঞ্জে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর বেহাল দশা : কাগজে-কলমে চিকিৎসক থাকলেও বাস্তবে নেই

অব্যবস্থাপনা, চিকিসকদের অনুপস্থিতি আর জনবল ও চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসা সেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্রসহ ৪ টি সাব-সেন্টারে ।

ফলে গুরুতর রোগী জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর সভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ বাসিন্দা।

আয়তন ও লোকসংখ্যায় এটি জেলার সর্ববৃহৎ এ উপজেলায় রয়েছে, ১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক ও ৪টি ইউএসসি ও ১২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।

সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, কাগজে-কলমে ৮ জন মেডিকেল অফিসার দেখানো হলেও কার্যতঃ আরএমওসহ (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) ৩ জন ডাক্তার রয়েছেন।

তাও আবার ডিউটি বন্টন ব্যবস্থায় প্রতিদিন মাত্র ১ জনকে পাওয়া গেছে। কাগজে-কলমে দেখানো ৫ ডাক্তারের অবস্থান হচ্ছে, ডাক্তার শোভন দাস প্রেষনে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডাক্তার মৌরুমী আক্তার প্রেষণে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডাক্তার সৈয়দ সাবরিনা সিদ্দিকা প্রেষনে ঢাকা মুকদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডাক্তার মাহমুদা বেগম মাতৃত্ব ছুটি ৬ মাস ভোগ করার পর যোগদান না করেই পুনরায় ২ মাসের ছুটির আবেদন করেছেন।

এদিকে ডাক্তার মাহমুদার বিরুদ্ধে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালে তার ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে তার ভুল চিকিসসায় শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

ডাক্তার নাদিয়া ফেরদৌস ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বর্তমানে স্বামীসহ কানাডায় অবস্থান করছেন এবং সরকারি বেতনভাতাদি গ্রহণ করছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৭০/৭৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন সাড়ে ৩শ হতে ৪শ রোগী সেবা নিতে আসে । এছাড়া জরুরী বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী আসে।

একজন চিকিৎসক দিয়ে বিপুল সংখ্যক রোগী সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বর্তমানে রোগী সামাল দিতে সেকমোদের দিয়ে রোগী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া সাব- সেন্টারগুলোতে যে ২/৩ জন ডাক্তার পোস্টিং রয়েছে তাদেরকেও উপজেলা হাসপাতালেই ডিউটি করতে হচ্ছে । ফলে সাব- সেন্টার ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। সাব সেন্টারগুলোতে মাসে ১/২ দিনের বেশী চিকিৎসকের দেখা মিলছে না।

এদিকে বর্হিবিভাগ সাড়ে ৮টা হতে আড়াইটা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া বর্হিবিভাগের রোগী দেখার সময়ে টাকা নিয়ে রোগী দেখার প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে।

এক্্র-রে ম্যান না থাকায় এক্্র-রে সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে রোগীরা। এ সুযোগে দালালা বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে রোগীদে পাঠানোর সুবিধা ভোগ করছে।
হাসপাতাল ও সাব -সেন্টারগুলোতে ১৬ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। জুনিয়ার কনসালটেন্ট গাইনী ১,জুনিয়ার কনসালটেন্ট সার্জারী ১, মেডিকেল অফিসার ৫টি, সহকারী সার্জন ০৯ টি, এমটি ল্যব: ১টি, এমটি রেডিওলজি ১টিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে সব মিলে ৬৯টি পদ শূন্য রয়েছে।

এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে দালাল চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সম্প্রতি বাহিরের দালাল চক্রের দৌরাত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরদিকে অবকাঠামো সমস্যায় বর্তমানে ৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতের ভবন নির্মানের কাজ চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প.প. কর্মর্কতা ডাক্তার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সিফন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর.এম.ও) আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান চাঁদপুর টাইমসকে, আমারা কঠোর পরিশ্রম করে ডাক্তার সংকটের মাঝেও সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করে চলছি। আমরা প্রাণপণ চেষ্টায় দিবা-নিশি ডিউটি করে চলছি। এভাবে আর কতদিন ? আমরা দিনে ডিউটি করে আবার রাতে ডিউটি করতে করতে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছি এবাভে আর পারছি না , চিকিৎসক সংকট জরুরী নিরসন করা প্রয়োজন। হাসপাতালের রোগীর যেহারে চাপ বাড়ছে তাতে ১শ শয্যায় উন্নীত করা দরকার। যদিও ভবনের কাজ শেষ হলে ৫০ শয্যায় উন্নীত হতে যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মর্কতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, চিকিৎসক সংকট নিরসন হলে কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করা যেতো।

তিনি আরো ও জানান, ৩৩তম বিসিএস হতে ৩৯ তম বিসিএস পর্যন্ত ফরিদগঞ্জে চিকিৎসক দেওয়া হয়নি। দালাল মুক্ত হাসপাতাল রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি । এখন দালাল মুক্ত বলা চলে।

নাদিয়ার অনুপস্থিতির জন্য শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচেছ। ডাক্তার মাহমুদা মাতৃত্ব ছুটি বৈাগ করার পর যোগদান না করেই ২ মাসের অর্গিম ছুটির জন্য আবেদন করেছে।

হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা ও জনবল সংকটের বিষয় উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে আসা করি সমস্যাগুলো অচিরেই সমাধান করতে পারবো। অনিয়মের বিষয়ে বলেন , অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় নয়, সুনিদিৃষ্ট অভিযোগ ফেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রতিবেদক- শিমূল হাছান
৪ জুলাই ২০১৯