ফরিদগঞ্জ (দক্ষিণ) ইউপি-তে অবশেষে ১৬ বছর পর নির্বাচনের ঘন্টা বেজে উঠেছে। আর একদিন পর ২৫-এ জুলাই সেই অপেক্ষার নির্বাচন। অথচ, নির্বাচন নিয়ে ভোটারগণ স্পষ্টভাবে কিছু বলতে অনীহা। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলছেন ভোট কি সুষ্ঠ হবে নাকি আবার রাতের আঁধারে ভোট হয়ে যাবে?
ভোটারগণ কি স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন। দাঙ্গা-হাঙ্গামা রোধে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেবেন। গত কয়েকদিন যাবত এলাকায় বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। ভোটেরদিন বহিরাগতরা কেন্দ্রে হাঙ্গামা করবে কি না। ভোটারদের মধ্যে এমনই নানা আশংকা দানা বাধছে।
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী না থাকায় গুরুত্ব বেড়ে গেছে বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের। সকল আশংকা থেকে মুক্ত থাকার জন্য ভোটারদের প্রতি দৃঢ় আহবান জানিয়েছেন রিটার্ণিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, ভোটারগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন। সকল প্রকার অনিয়ম কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
সরেজমিন জানা গেছে, উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ (দক্ষিণ) ইউনিয়নের মানুষ কৃষি কাজের পাশাপাশি দেশ বিদেশে চাকরি ও ব্যবসা করে দেশ ও এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এখানে রয়েছে একটি কলেজ, ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কয়েকটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যেও দারিদ্র্য পিড়ীত মানুষ যে নেই- এমন নয়। এলাকাটি নানাভাবে অবহেলিত। মাত্র প্রায় দেড় বছর পূর্বে নির্মিত উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নের প্রধান সড়কটি খানাখন্দকে ভরা। গ্রামের ভেতরের অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা। বর্ষাকালে বৃষ্টির পর যানবাহন চলাচল করা দূরুহ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ গত ১৬ বছর যারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে ছিলেনে তারা ছিলেন এক প্রকার অনির্বাচিত, তাই জনগণের স্বার্থে তাদের কোনো কর্মকাণ্ড প্রকাশিত হয়নি।
সূত্রে প্রকাশ, প্রায় ১৬ বছর পূর্বে এ ইউনিয়নে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয় লাভ করেন তৎকালিন বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান। কিন্তু, নির্বাচনের দিন উত্তর চরবাড়ালি কেন্দ্রে হাঙ্গামাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল লতিফ পন্ডিত বাদী হয়ে নির্বাচন ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের করেন।
পর্যায়ক্রমে মামলাটি মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। এক পর্যায়ে ২০১১ সালে ওই কেন্দ্রে পুনঃ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। পুনঃ নির্বাচনে প্রয়োগকৃত প্রায় সব ভোট পেয়ে, ভোটের ফলাফলে এগিয়ে যান চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল লতিফ পন্ডিত। এতে তিনি চেয়ারম্যান এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
কিন্তু, মহামান্য হাইকোর্টে নানা জটিলতার প্রশ্নে মামলা চলমান থাকায় এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হতে পারেনি। আব্দুল লতিফ পন্ডিত চেয়ারম্যান-এর দায়িত্ব পালন করার পরও, এ মামলা পরিচালনা করেছেন কে- এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। সম্প্রতি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ পন্ডিত মৃত্যুবরণ করেন। এরপরই এ ইউনিয়নের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় আর কোনো বাধা থাকেনি।
সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা হলেন মোঃ আলী আকবর পাটওয়ারী (চশমা), মোঃ আলমগীর হোসেন (আনারস), মোঃ রেজাউল করিম (টেলিফোন), মোঃ সফিকুর রহমান মোটর সাইকেল) ও সাইফুল আলম (নৌকা)। এলাকায় ঘুরে ভোটার দের কাছে জানা গেছে কাগজে-কলমে প্রার্থী পাঁচজন হলেও, নির্বাচনে জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে তিন জনের।
এরা হলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার সাইফুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাত্রলীগ উপজেলা কমিটির সাবেক আহবায়ক মোঃ আলমগীর হোসেন (রিপন) ও আলী আকবর। এদিকে, সদস্য (মেম্বার) পদে ৪১ জন ও সংরক্ষিত (নারী) সদস্য পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
ভোটের নানা জটিল অংকে এ তিনজনের যে কেউই জিততে পারেন বলে এলাকার অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের মতামত অনুযায়ী নির্বাচনের প্রতীক দেয়ার পর হতে গণসংযোগের নামে বহিরাগত যুবক ও উঠতি তরুন দলবেঁধে এলাকায় যাতায়াত করছেন।
এরা নির্বাচনের দিন এলাকায় ও ভোট কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারেন। তা হলে, নির্বাচনী পরিবেশ ব্যাহতসহ দাঙ্গা হাঙ্গামা ও অন্যান্য শান্তি ভঙ্গের আশংকা বিদ্যমান। তারা এ ব্যপারে নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সকল দায়িত্বশীল মহলের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন।
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকলেও, দলের নিষেধ থাকায় বিএনপি’র কোনো প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে, এ নির্বাচনে বিএনপি ভোটারদের কদর বেড়ে গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিএনপি’র ভোটারদের নিজ নিজ পক্ষে টানতে নানা কৌশল নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এ ভোটাররাই হতে পারেন কারও নিয়ামক শক্তি।
এদিকে, গ্রামে ও হাটবাজারে ঘুরে কথা হয় ভোটারদের সঙ্গে। অধিকাংশ জনই জানিয়েছেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে তারা কেন্দ্রে যেতে
প্রতিবেদক- শিমূল হাছান ২৩ জুলাই ২০১৯