আজ ১০ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঘরে ঘরে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সারাদেশে সরকারি ও আধা-সরকারি অফিসের কর্মচারীরা দশম দিনের মতো কাজে যোগদানে বিরত থাকেন।
তবে বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও ব্যবসা কেন্দ্র খোলা ছিল। সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে কালো পতাকা ওড়ে। এমনকি রাজারবাগ পুলিশ লাইন, থানা ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও কালো পতাকা উত্তোলিত হয়।
সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসভবনে একদল বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। বঙ্গবন্ধু এ সময় বলেন, সাত কোটি বাঙালি আজ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যে কোনো মূল্যে তারা এই অধিকার আদায়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বাঙালিরা অনেক রক্ত দিয়েছে। এবার আমরা এই রক্ত দেওয়ার পালা শেষ করতে চাই। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিকেলে ওয়ালীপন্থী ন্যাপের উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সভাপতিত্ব করেন। ‘লেখক-শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে লেখক ও শিল্পীরা রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ছাত্ররা নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে মহাসচিব উ-থান্টের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মীসভায় ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষরিত স্বাধীন-বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের এক বিবৃতিতে বাঙালি সৈন্য, ইপিআর ও পুলিশবাহিনীর সদস্যদের প্রতি পাকিস্তানি উপনিবেশবাদী সরকারের সাথে সহযোগিতা না করার আবেদন জানানো হয়।
এদিন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই শেষ কথা। যারা মনে করেছিলেন শক্তির দাপটে আমাদের উপর তাদের মতামত চাপিয়ে দিবেন, বিশ্বের দরবারে তাদের চেহারা আজ নগ্ন হয়ে ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশের জনগণের নামে আমি যে নির্দেশ দিয়েছি সচিবালয়সহ সরকারি ও আধাসরকারি অফিস-আদালত, রেলওয়ে ও বন্দরগুলোতে তা পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর বিবৃতিতে আরো বলেন, ক্ষমতাসীন চক্র প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। সামরিক সজ্জা অব্যাহত রেখে তারা বাংলার বুকে এক জরুরি অবস্থা কায়েম রাখার প্রয়াসী।
ইতিহাসের এইদিনে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দৈনিক পাকিস্তান’ অবিলম্বে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। কালবিলম্ব না করে জনগণের দাবিও মেনে নেয়ার কথা বলা হয়। ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য পিপল’ পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সমালোচনা করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।
করাচিতে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে মতবিনিময়ের জন্য ১৩ মার্চ ঢাকায় আসবেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতা যাতে হস্তান্তর করা যায় সে জন্য আগে আমাদের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের চেষ্টা করতে হবে
বার্তাকক্ষ
১০ মার্চ ২০১৯