চাঁদপুরের পদোন্নতিপ্রাপ্ত বিদায়ী পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেছেন, চাঁদপুরে আসার সময় আমার মনটা অনেক খারাপ ছিল।
আগের কর্মস্থল পাবনাই আমার কাছে ভাল লাগছিল। কিন্তু বিদায় বেলায় আমি অনেক তৃপ্ত। চাঁদপুর আমাকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। এখানে কাজ করে আমি পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পিপিএম পেলাম। আজ অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। সত্যিই চাঁদপুর জেলা ভুলার মত নয়।
শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর রোটারী ভবনে জেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও পুলিশ সুপারের পদোন্নতি ও বদলি জনিত বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এসময় জিহাদুল কবির বলেন, আমি অল্প সময় ছিলাম চাঁদপুরে।
আমি চাঁপদুরে যোগদানের পরেই জাতীয় নির্বাচন অনিুষ্ঠত হয়। তাই আমি পরিকল্পনা করে বেশি কিছু করতে পারিনি এই জেলার জন্য। আপনারা এ বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
পুলিশ সুপার বলেন, চাঁদপুর জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বাংলাদেশের মডেল। এ বছর জেলায় ১৯শ’ ২২টি কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যারা নতুন কমিটিতে এসেছেন আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের কাজের মাধ্যমে এই কার্যক্রমটি আরো বেগবান হবে।
কমিটিতে পদবী পেলে অনেকে কাজ করেন না। যাদেরকে কাজে পাওয়া যাবে না তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিবেন, কাজের লোকদের বিকল্প কাউকে এখানে রাখার প্রয়োজন নেই। চাঁদপুর পৌরসভার বাইরে উপজেলাগুলোতেও আপনারা মনোযোগ দিবেন।
তিনি আরো বলেন, ইতমেধ্য শহরের ২৬টি স্থালে ৬০ টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এতে করে শহরের আইন শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ আরো সহজ হবে। কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের কাজের জন্য রাতের চাঁদপুর দিনের মতই নিরাপদ রয়েছে।
এসপি বলেন, প্রতিদিনই পুলিশ সুপারের একশ থেকে দুইশ জন দর্শনার্থী আসে। এতে করে আপনার মনে করেন পুলিশ সুপার জনবান্ধব হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তা না। এটা আমার ব্যর্থতা, পুলিশের ব্যর্থতা, থানা পুলিশের ব্যর্থতা। এসপি অফিস বিচারের জন্য নয়।
এ সকল সমস্যা থানাতেই সমাধান হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে সমাধান না হওয়ায় জনসাধারণ এসপি অফিসে আসে। তাই থানা পুলিশের আরো দায়িত্ব নিয়ে মানুষকে সেবা দিতে হবে।
জিহাদুল কবির বলেন, বাংলাদেশে পুলিশের চাকুরীর জন্য সবচেয়ে সহজ জেলা হচ্ছে চাঁদপুর। এখানে মানুষ আইনে বিশ্বাসী। বিশ্বাস করেন আমি আপনাদের খুশি করার জন্য বলছি না, সত্যিই বাংলাদেশের আর কোথাও এমন পরিবেশে নেই। পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া তীরের মানুষজন অন্যকে সম্মান জানাতে পারেন বলেই আপনারও সম্মানিত হয়।
আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে এভাবে সমর্থন দেওয়া। আপনাদের সহায়তার কারণেই আমার সময়টা অনেক ভালো কেটেছে চাঁদপুরে। বিদায়ী বেলায় চাঁদপুরের সকল মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করছি। আপনারা আমার জন্যে দোয়া করবেন সব সময়।
চাঁদপুর জেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি ডা. এসএম শহীদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি কাজী শাহাদাতের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতি প্রাপ্ত) মো: মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক লক্ষন চন্দ্র সূত্রধর, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সাধারন সম্পাদক সূফী খায়রুল ইসলাম খোকন, চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: নাসিম উদ্দিন, পৌর কমিউনিটি পুলিশিং এর সাধারন সম্পাদক জামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সহ-সভাপতি ডা. পিযুষ কান্তি বড়ুয়া। উপজেলা কমিউনিটি পুলিশং সভাপতিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আলী আশ্রাফ দুলাল ও সাধারন সম্পাদকদের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ মিন্টু, সদর উপজেলার পক্ষে সালাউদ্দিন জিন্নাহ, এম এ আউয়াল, মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ আলমগীর প্রমূখ।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন চাঁদপুর ৬ কমিউনিটি পুলিশিং অঞ্চলের সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান গাজী ও গীতা পাঠ করেন রোটারিয়ান গোপাল চন্দ্র সাহা।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯