Home / সারাদেশ / মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে সবার উদ্যোগ দরকার : আইজিপি
মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে সবার উদ্যোগ দরকার : আইজিপি

মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে সবার উদ্যোগ দরকার : আইজিপি

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি বলেছেন, ‘দেশ থেকে মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে সর্বস্তরের জনসাধারণের সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। জনতার সহযোগিতা ছাড়া উন্নয়নের পথের এ তিনটি বাঁধা দূর করা অসম্ভব। শুধু অভিযান পরিচালনা করে, মামলা দিয়ে বা গ্রেপ্তার করে এসব নির্মূল করা সম্ভব নয়।’

ফরিদপুরে ‘মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটওয়ারী সোমবার (২৪ জুন ) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ লাইন্স ময়দানে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় জেলা কমিউনিটি পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে এ কথা বলেন।

আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি জানান, এক বছরে ফরিদপুরে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ১৬২টি । এর মধ্যে শুধু মাদকের মামলাই হয়েছে ১ হাজার ৬৩১টি। জঙ্গিবাদের মতো মাদকের ক্ষেত্রেও চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণ করতে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, যুব সমাজ, মসজিদের ইমাম, রাজনৈতিক নেতাকর্মীকেও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘মাদক ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে পরিবারের বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রত্যেক পরিবারের অভিভাবকরা সচেতন হলেই এটা সম্ভব। সারাবিশ্বে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক অপার বিস্ময়। এ উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিতাপের বিষয় হলো কিছু কিছু অমানুষ এ উন্নয়নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আমাদের মাদক দিয়ে, সন্ত্রাস দিয়ে, জঙ্গি দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে। তারা চায়না এদেশের উন্নয়ন হোক।’

তিনি আরো বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন টেকসই শান্তি। আর টেকসই শান্তি আসে টেকসই নিরাপত্তা থেকে। পুলিশ জনগণকে টেকসই নিরাপত্তা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের সহায়তায় পুলিশ ইতিমধ্যে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে বর্তমানে আমাদের টার্গেট মাদক নির্মূল করা। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এ যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে চাই। এজন্য আমরা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাহায্য চাই। কেননা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া পৃথিবীতে কোন দেশের পুলিশ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব তথ্য পাই তার ৯৯ ভাগ তথ্য দেয় জনগণ। এজন্য জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের পথের বাধা দূর করবোই এবং এ ব্যাপারে একটি বৈশিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবো। এ কাজে ‘কেউ আমাদের দাবায় রাখতে পারবে না।’

মাদক ও জঙ্গিবাদ একটি সামাজিক সমস্যা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘সমাজের মানুষদের নিয়েই এটি মোকাবেলা করতে হবে। অন্যদিকে জঙ্গীবাদ শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। একে এখন পর্যন্ত আমরা যেভাবে মোকাবেলা করে আসছি, যা পৃথিবীর কাছে মডেল।’

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। ফরিদপুরে মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে তিন হাজার। এদের সুপথে আনা ও নির্মূলের ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফরিদপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সমাজ থেকে মাদক, জঙ্গি সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব নয়। পাশের ঘরে আগুল লাগলে আমাদেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত্ব হবে। আমরা যদি একজন ব্যাক্তিকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে সরিয়ে আনতে পারি তবে সেটা হবে সত্যিকারের দেশপ্রেমের কাজ। তিনি উপস্থিত সকলকে এ কাজে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য শপথ নেওয়ার আহব্বান জানান।’

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ওই সভার সভাপতি ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো.জাকির হোসেন খান।

সভায় আরো বক্তব্য দেন ফরিদপুর কমিউনিটিং পুলিশের আহব্বায়ক প্রফেসর শাহজাহান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মৃধা, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মোশার্রফ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাজ্জাক মোল্লা, জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা হাসান, ফরিদপুর ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো.আকরামুল হক, ফরিদ শাহ মসজিদের খতিব আবুল কালাম আজাদ, সদর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন ফকির প্রমুখ।

সভা শেষে মাদক ব্যবসা ও সেবন ছেড়ে আলোর পথে আসা ৭৫ জন পুরুষ ও ৮ জন নারীর কর্মসংস্থানের জন্য রিক্সা, ভ্যান ও সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। এর আগে আইজিপি ফরিদপুর পুলিশ লাইনে নারী পুলিশের ব্যারাক, নগরকান্দা থানা ভবন, চন্দ্রপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের নব নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন।

এছাড়া পুলিশ টেলিকম ভবন, পুলিশ লাইনস মাল্টিপারপাস হল এবং চিকিৎসক ও নার্সদের ডরমেটরি হলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

বার্তা কক্ষ
২৪ জুন ২০১৯

এজি