সারাদেশ

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা

ঈদ মোবারক। বছর ঘুরে খুশির বারতা নিয়ে আবার এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশের প্রতিটি মুসলমান আজ সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। এ উপলক্ষে ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীর লাখ লাখ মানুষ শেকড়ের টানে ইতিমধ্যেই ফিরে গেছেন শৈশবের চেনা জনপদ গ্রাম-গঞ্জে।

মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল আজহা একাধিক কারণে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো হালাল পশু কোরবানি করা এবং সামর্থ্যবানদের জন্য পবিত্র হজব্রত পালন করা।

হজব্রত পালন করতে সবাই সক্ষম না হলেও মহান আলস্নাহর অপার অনুগ্রহ লাভে ধন্য হতে পশু কোরবানির মাধ্যমে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় উদযাপন করবে অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব। এ উপলক্ষে ঘরে ঘরে বয়ে যাবে আনন্দের ফল্গুধারা।

ডেঙ্গুর দাপটে এবার অনেক পরিবারেই এ আনন্দ অনেকটা ম্স্নান হয়ে গেছে। বিশেষ করে যে সব পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, তাদের কাছে ঈদ যেন শোকের বার্তা বয়ে এনেছে।

এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যাদের আদরের সন্তান, ভাই-বোন কিংবা বাবা-মাসহ নিকটাত্মীয়-স্বজন মারা গেছে, তাদের পরিবারে এখন শোকের মাতম বইছে। ঈদের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় তাদের বুক যেন আরও ততই ভারী হয়ে উঠছে।

প্রসঙ্গত, প্রায় চার হাজার বছর আগে আলস্নাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আলস্নাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের কামনায় পশু কোরবানি করে থাকে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য আলস্নাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। তাই কোরবানি করাই এই দিনের উত্তম ইবাদত বলে ধর্মীয়ভাবে বলা হয়েছে।

সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় কাল দিনের শুরুতেই ঈদগাহ বা মসজিদে সমবেত হবে ঈদুল আজহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের জন্য। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে নামাজ আদায়ের পর কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঘুচে যাবে সব ভেদাভেদ।

নামাজ শেষে মুসলিস্নদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আলস্নাহর দরবারে আকুতি জানাবেন। এরপর বাড়ি ফিরে আলস্নাহর উদ্দেশে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদের প্রধান কর্তব্য সম্পন্ন হবে।

জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দু’ দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হবে না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের একভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে।

বস্তুত ঈদুল আজহা শুধুমাত্র পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এ ঈদ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও আত্মোপলব্ধির শিক্ষা দেয়। ঈদুল আজহার চেতনা মহান আলস্নাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার শিক্ষাও দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদুল আজহার দিনে হালাল পশু কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কাজ।

পবিত্র কুরআনে সূরা কাওসারে বলা হয়েছে,’অতএব আপনার পালনকর্তার নামে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ সূরা হজে বলা হয়েছে ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’

কোরবানির পশু সম্পর্কে কুরআন মজিদে আরও বলা হয়েছে, ‘এগুলোর গোশত বা রক্ত আমার কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া ঠিকই পৌঁছে যায়।’ রাসুল (সাঃ)-এর হাদিসে বলা হয়েছে, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আলস্নাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না সে যেন ঈদগাহে না যায়।’

পবিত্র ঈদুল আজহার তাৎপর্য তুলে ধরে বরাবরের মতোই দেশের সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ সংখ্যা। বেতার থেকে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। অন্যদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে রয়েছে নানা রকম আনন্দ-আয়োজন। সোমবার থেকে টানা প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে চলবে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

ঈদ উপলক্ষে রোববার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। চাকরিজীবীদের কেউ কেউ ঈদ উদযাপনের জন্য ১৪ আগস্ট একদিনের অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছেন। ফিরে আসবেন আগামি সপ্তাহে। সংবাদপত্র অফিসগুলোতেও ৩ দিনের ছুটি শুরু হচ্ছে আজ রোববার থেকে। ছুটি শেষ হবে মঙ্গলবার। এ কারণে ঈদের দিন থেকে পরবর্তী ৩ দিন দেশের কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না।

চাঁদপুরের ৯০ ভাগ ঈদগাহেই সকাল ৮টায় ঈদের জমায়াত শুরু হচ্ছে । তবে কোনো কোনো মসজিদ সংলগ্ন বৃষ্টির সম্ভাবনার কারেণে বিশেষ করে মসজিদেই ব্যবস্থা রেখেছে আয়োজক কমিটি। বিশেষ করে কোরবাণীর কারণেই ঈদের নামাজের সময় আগানো হয়েছে ।

বার্তা কক্ষ
১২ আগস্ট ২০১৯

এজি

Share