জাতীয়

দুদকের জালে চাঁদপুরের একজনসহ অর্ধশত সাবেক ও বর্তমান সাংসদ

বেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এই অনুসন্ধান জালে রয়েছেন অর্ধশত বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য। এদের অনেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে দুদক।

অনুসন্ধান জালে থাকা বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যদের স্ত্রী, ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘অনুসন্ধান পর্যায়ে অভিযোগের সত্যতা মিললে আইনগত প্রক্রিয়ায় তা নিষ্পত্তি করা হবে।’

ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী, চাঁদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামছুল হক ভূঁইয়া ও নাটোর-৪ আসনে বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

শিগগিরই আরও যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাদের মধ্যে আছেন— নীলফামারী-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি শওকত চৌধুরী ও তার স্ত্রী মাহবুবা খাতুন, বগুড়া-৩ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি আবদুল মোমিন তালুকদার, তার স্ত্রী মাছুদা মোমিন ও ভাই আবদুল মুহিত তালুকদার।

পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও তলবি নোটিশ পাঠিয়ে সম্পদের বিবরণী চাওয়া হবে। পরে গরমিল দেখা গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র।

দুদক জানায়, গত ৫ মে সরকারি টাকা আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান দুই সংসদ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তারা হলেন— বগুড়া-২ আসনের জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও নোয়াখালী-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী। গত ১৭ এপ্রিল দুদক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এমপি জিন্নাহকে তলবি নোটিশ পাঠান। আর ২৮ এপ্রিল সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।

মোহাম্মদ আলীকে গত ৫ মে সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক টিম। জিজ্ঞাসাবাদে নেতৃত্ব দেন দুদক উপপরিচালক সেলিনা আক্তার মণি। এই সাবেক এমপির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন অনিয়ম ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস নোয়াখালী-৬ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য। ওই আসনে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। দুদকের তথ্য বলছে, মোহাম্মদ আলী শত কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

একই দিনে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক টিম। জিজ্ঞাসাবাদে নেতৃত্ব দেন দুদক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে জিন্নাহর বিরুদ্ধে। তবে এমপি জিন্নাহ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

যদিও দুদকের দাবি, এই সংসদ সদস্য অবৈধভাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে তাদের কাছে তথ্য আছে।

গত ৬ মে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ লেনদেন ও দুর্নীতির অভিযোগে চাঁদপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি শামছুল হক ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সমিতির সভাপতি শামছুল হক ভূঁইয়া অ্যাপোলো গ্রুপের সিইও ও ঠিকাদার। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শত শত কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। শামছুল হক ভূঁইয়া ২০১৪ সালে চাঁদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ব্যবসা, চোলাচালানসহ নানা অভিযোগে ৭ মে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর-৪ আসনের সাবেক এমপি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে গত বছরের ৮ মার্চ অনুসন্ধান শুরু হয়। নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি দুলুর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে ৫০০ কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে।

তবে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের পর দুলু সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনও অভিযোগেরই ভিত্তি নেই। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই দুদককে ব্যবহার করছে সরকার।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে গত ২৩ এপ্রিল ঝিনাইদহ-৪ আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি মো. শহীদুজ্জামানকে দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মেফতাউল জান্নাত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, অনিয়ম আর ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ২৯ এপ্রিল।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে বগুড়া-৩ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি আবদুল মোমিন তালুকদার ও তার স্ত্রী মাছুদা মোমিন তালুকদার এবং ভাই আবদুল মুহিত তালুকদারকে দুদকে তলব করে নোটিশ পাঠানো হয় ১ এপ্রিল। দুদক উপপরিচালক মলয়কুমার সাহার সই করা ওই নোটিশে তাদেরকে ১১ এপ্রিল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হলেও বর্তমানে তারা পলাতক রয়েছেন।

গত ৮ এপ্রিল নীলফামারী-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি শওকত চৌধুরী ও তার স্ত্রী মাহবুবা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। ১৬ এপ্রিল দুদকে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই সময় চেয়ে আবেদন করেন শওকত চৌধুরী।

এর আগে ২০১৬ সালে দুদক শওকত চৌধুরীর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করে। ওই বছরের ৮ ও ১০ মে রাজধানীর বংশাল থানায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সোয়া কোটি ও অন্য ঘটনায় ১২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পৃথক মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। (বাংলা ট্রিবিউন)

বার্তা কক্ষ
১০ মে ২০১৯

Share