চাঁদপুর

ক্যানসার গবেষণায় চাঁদপুরের কৃতি সন্তান অস্ট্রেলিয়া যাত্রা

অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক সমপ্রতি এমন একটি পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন, যা দিয়ে রক্তের একটা পরীক্ষা করে সব ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে খবরটি দ্য টেলিগ্রাফ, সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ন্যানো টেকনোলজির (এআইবিএন) ক্যানসার শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবনের সে খবর বাড়তি মনোযোগ কাড়ল গবেষক দলের সদস্য আবু আলী ইবনে সিনার কথা জেনে। ১২ জন গবেষকের একজন ড. সিনা বাংলাদেশি।

চাঁদপুর থেকে ব্রিসবেন: বিদেশ-বিভুঁইয়ে বসে বাংলাদেশি কারও সাফল্যের সংবাদ শুনলে ভালো লাগে এবং আনন্দে ভরে যায় মন। সেই আনন্দেই আগ্রহ নিয়ে ফোনে যোগাযোগ করি তাঁর সঙ্গে। আলাপে আলাপে জানা হয় আবু আলী ইবনে সিনার জীবনকথা।

ড. সিনা থাকেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন শহরে। ফ্যাশন ডিজাইনার স্ত্রী সাবিহা সুলতানা এবং ছেলে জাবিরকে নিয়ে তাঁর ছোট সংসার।

বাংলাদেশি এই গবেষকের বেড়ে ওঠা চাঁদপুরের বাবুরহাটে। শিক্ষক দম্পতি মোঃ শহীদুল্লাহ ও সুরাইয়া আক্তারের প্রথম সন্তান তিনি।

স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলেন। তবে সে চাকরিতে মন টেকেনি।

সিনা বলছিলেন, ‘গবেষণার কাজের জন্যই শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হতে চাচ্ছিলাম। একসময় সুযোগও পেলাম।’ সেই সুযোগটা ছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন (বায়োকেমিস্ট্রি) বিভাগে। ২০১১ সালে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে।দুই বছর সেখানে শিক্ষকতা করেছেন।

২০১৩ সালে বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ন্যানো টেকনোলজি থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পারসোনালাইজড ন্যানো মেডিসিনে ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছেন সিনা।

যুক্ত হলেন ক্যানসার গবেষণায়: ২০১২ সালের কথা। অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ন্যানো টেকনোলজির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন উপপরিচালক অধ্যাপক ম্যাট ট্রাউ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নিলেন। তিনি প্রকল্পগুলো শুরু করেছিলেন ক্যানসার শনাক্তের সহজ পদ্ধতি খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে। যাঁরা পিএইচডি করছিলেন তাঁদেরই যুক্ত করা হয় সেসব প্রকল্পে।

২০১৫ সালে এমনই একটি প্রকল্পে কাজের সুযোগ পান আবু আলী ইবনে সিনা। অধ্যাপক ম্যাট ট্রাউয়ের অধীনে গবেষণা প্রকল্পটিতে ড. সিনা, আরেক বাংলাদেশি গবেষক ড. মুহম্মদ জে এ সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন দেশের ১২ জন গবেষক ছিলেন। তবে অধ্যাপক ম্যাট ট্রাউয়ের নেতৃত্বে প্রধানত গবেষক ড. লরা কারেস্কোসা ও ড. সিনা ছিলেন মূল ভূমিকায়। তাঁদের সে গবেষণাতেই উঠে এল ক্যানসার নির্ণয়ের এই নতুন পদ্ধতি।

সুফল পাবে বাংলাদেশ: বর্তমানে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে উদ্ভাবনটি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষণাগারে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এর সুফল পাওয়া যেতে পারে। সব মিলিয়ে আরও বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে বলে জানালেন সিনা।

সফল হলে স্বল্প সময়ে শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই শনাক্ত করা যাবে ক্যানসার। শরীরের যে কোনো অঙ্গের যে কোনো ধরনের ক্যানসারের উপস্থিতির কথা জানা যাবে এই পরীক্ষায়। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিক পর্যায়েই যে কোনো ধরনের ক্যানসার শনাক্ত করা যাবে। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসাতেই ক্যানসার নির্মূল সম্ভব হবে।

আবু আলী ইবনে সিনা জানালেন, ‘পদ্ধতিটি সহজ ও সাশ্রয়ী। রক্তের ডিএনএ তৈরি হওয়ার পর মাত্র ১০ মিনিটে ক্যানসার শনাক্তকরণ সম্ভব হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে জীবন যেমন বেঁচে যাবে, তেমনি চিকিৎসা ব্যয়ও কমবে। বাংলাদেশের জন্য এই উদ্ভাবনের সুফল ভাগাভাগি করতে আরও কাজ করব আমি।’ (প্রথম আলো)

বার্তা কক্ষ
৭ জানুয়ারি,২০১৯

Share