Home / চাঁদপুর / চাঁদপুর ডিশ ক্যাবল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানির আশংকা
dish-chable-news

চাঁদপুর ডিশ ক্যাবল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানির আশংকা

চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠিত ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসাকে ধ্বংস করে নিজেদের আয়ত্ত্বে আনার স্বার্থে অবৈধ দখল প্রক্রিয়ায় নেমেছে একটি চক্র। চক্রটি স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চাঁদার জন্যে গ্রাহকদের জিম্মি করে শহরের ডিশ ব্যবসাকে বৈধ লাইসেন্সধারী মালিকদের কাছ থেকে চিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।

এ নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর ফলে শহরের সাধারণ মানুষদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, মাদ্রাসা রোড, জিটি রোডসহ বড় কয়েকটি এলাকার ডিশ সেবা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এসব অঞ্চলের ডিশ গ্রাহকরা।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এনএসআই বরাবর চাঁদপুর জেলা ক্যাবল মালিক সমিতির পাঠানো অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, চাঁদপুর সদরের ঢালীর ঘাট এলাকার ওহাব মিজির ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু সড়ক এলকার মিজান মিজির ছেলে মাঈনুদ্দিন মিজি, লিটন ডিপার্টমেন্টার স্টোর মালিকের ছোট ভাই খোকন, সোহাগ, মৃত খালেক গাজীর ছেলে তুহিনসহ কিছু চিহ্নিত বখাটেও ও তাদের সহযোগীরা মিলে ওইসব অঞ্চলের ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি ডিশ গ্রাহকদের জিম্মি করে শহরের বাইরে থেকে ডিশ সংযোগ নিয়ে আনার অপকৌশল হিসেবে নিরবিচ্ছন্ন ডিশ লাইন সংযোগকে কেটে ছিড়ে ছিন্নবিন্ন করে ফেলেছে।
এদের চক্রে স্থানীয়দের মধ্যে যুক্ত হয়েছে মাদ্রসা রোড, বঙ্গবন্ধু সড়ক ও বিষ্ণুদি এলাকার কাদের, সফু, আলী, শাকিব, রবিন, হাবিব, রাজু, মামুন, প্রিন্সসহ একটি বখাটে গ্রুপ। এ গ্রুপি ডিশ সংযোগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছুরি-ছিনতাই করে গ্রাহকদের হয়রানি করছে।

বৈধ লাইসেন্স মালিকরা গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা মোটা অংকের চাঁদা দাবি করছেন বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিক সমিতি।
এতে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার পরিবার টেলিভিশন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে গত ২৮ জুন চাঁদপুর সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং ১২৪৯-২৮/০৬/২০১৯) করা হয়েছে।
অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরির প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় গত ২২ আগস্ট চাঁদপুর সদর মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ নাসিম উদ্দিনের তত্ত্ববধানে একটি মিমাংসা বৈঠক হয়। এতে বলা হয় লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রকৃত ব্যবসায়ীগণ লাইসেন্সে নির্ধারিত এলাকা অনুযায়ী, পূর্বের মতো তাদের নির্দিষ্ট এলাকায় ডিশ সংযোগ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবে। কেউ কারো তার কাটাকাটিসহ মালামাল চুরি-ছিনতাই থেকে বিরত থাকবে।

ওই বৈঠকে চাঁদপুর জেলা ডিশ ক্যাবল মালিক সমিতির পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মজিবুর রহমান ও অভিযুক্তদের পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম সিদ্ধান্তপত্রে স্বাক্ষর করেন।
জানা যায় চাঁদপুর কেবল নেটওয়ার্ক নামের এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ দু’যুগ ধরে চাঁদপুর শহর ও শহরতলীতে বেশ সুন্দরভাবেই মানুষকে বিনোদন সেবা দিয়ে আসছে। এ সমিতির মধ্যে রয়েছে মেসার্স তারিফ এন্টারপ্রাইজ, নতুন বাজার ক্যাবল নেটওয়ার্ক, মেসার্স জুয়েল এন্টারপ্রাইজ, ডালাস ক্যাবল নেটওয়ার্ক, মিম ক্যাবল নেটওয়ার্ক, মের্সাস নিশি এন্টারপ্রাইজ, মের্সাস মোবাইল জোন, মের্সাস টেনোক্রেটস লিমিটেড, চাঁদপুর মোটর ওয়াকর্স ও মা ক্যাবল নেটওয়ার্ক, চাঁদপুর স্যাটেলাইট ক্যাবল নেটওয়ার্ক, ওয়াল্ড ভিশন ক্যাবল নেটওয়ার্ক, মেসার্স রাহিম এন্টারপ্রাইজ, টেকনোক্রেটস এন্ড কোং ক্যাবল নেটওয়ার্ক, বাবুরহাট ক্যাবল নেটওয়ার্ক, শাফি মাফি ক্যাবল নেটওয়ার্ক, মতলব ডিশ ক্যাবল নেটওয়ার্কসহ একাধিক লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু অভিযুক্তরা এসব লাইসেন্সধারী ও সমিতিকে তোয়াক্কা না করে মাদকসেবীদের সমন্বয়ে গ্রাহক ও বৈধ মালিকদের হয়রানি করে ডিশ সংযোগ অবৈধভাবে দখল করার চেষ্টা করছে।

শহরজুড়ে এ কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়কে ছিন্নছিন্ন করতে ওই চক্রটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করেছে। ফলে চাঁদপুরে বর্তমানে জেলা ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ীগণসহ সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায়।

এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকারদলীয় মন্ত্রী এমপিদের বরাতে এবং তাদের নাম ব্যবহার করে ওই স্বার্থান্বেষী মহলটি তৎপর হয়ে উঠেছে। চাঁদপুরের বর্তমান এমপির ইমেজকে ব্যবহার করে তারা নিজেদের ফায়দা লুটার জন্যে সর্বশেষ বর্তমান সরকারের সময়ে এসে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী ক্যাবল অপারেটরদেরকে হয়রানি ও সর্বস্বান্ত করার লক্ষ্যে নানাবিধ কৌশল প্রয়োগ করছে। আর এর দায়ভার গিয়ে পড়ছে বর্তমান সরকার ও স্থানীয় মন্ত্রী এমপিদের ইমেজের ওপর।

জনগণের কাছে ওই চক্রটি স্থানীয় মন্ত্রী এমপিদের ইমেজকে ব্যবহার করায় বর্তমানে সাধারণ জনগণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঢালীরঘাট জাহাঙ্গীর হোসেন জানায়, আমি বালিয়া ইউনিয়ন ঢালীরঘাট এলাকায় ডিশ ব্যবসা করি। শহরের কারো সাথে আমার ডিশ কেন্দ্রিক সম্পৃক্ততা বা চুক্তিপত্র নেই। অভিযোগের বিষয়ে থানায় একদিন ডাকা হয়েছিলো, সেখানেও আমি বলেছি এসবের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই।

চাঁদপুর পৌর এলাকায় একটি চক্র আপনার নাম ব্যবহার করে এবং আপনার কাছ থেকে ফিড লাইন এনে ব্যবসা করবে এমন কথা বলে একাধিক গ্রাহকের ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, এমন অভিযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদকের প্রশ্নে তিনি জানান, ‘এদের কাউকে আমি চিনি না। আমার সাথে এসবের সম্পর্ক নেই।’

এ ব্যাপারে চাঁদপুর ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, ‘আমরা জেনেছি চাঁদপুর শহরের বেশ কিছু এলাকায় আমাদের বৈধ লাইসেন্সধারী মালিকানাধিন ডিশ সংযোগ কাঁটাছেড়া করে একটি গ্রুপ নতুন করে লাইন টানছে। এ বিষয়ে থানায় একটি মিমাংসা বৈঠক হলেও অবৈধ দখলে তারা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।

তিনি আরো জানান, তাদের এরুপ বিশৃঙ্খলা ও গ্রাহক ভোগান্তির বিরুদ্ধে আমরা এরইমধ্যে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছি। জনৈক ডিশ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর নির্দেশে শহরের একটি বখাটে গ্রুপ তার কাটাছেঁড়া, অবৈধ দখল ও গ্রাহকদের মাঝে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।
এ অবস্থায় তিনি কেবল মালিক ও অপারেটরদের পক্ষে বিষয়টি সমাধানপূর্বক পূর্বের ন্যায় ক্যাবল নেটওয়ার্ক সেবা নিরবিচ্ছিন্ন করতে আহবান জানান।