হাজীগঞ্জ

হাজীগঞ্জে দু’প্রতিবন্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে ‘গায়েবী’ মামলা : এলাকায় ক্ষোভ

জন্মগতভাবে চোখে দেখেন না মো. কবির হোসেন ও পা-খোঁড়া মোহাম্মদ মফিজ। দুই প্রতিবন্ধী নিয়মিত ভাতাও পাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী হয়েও পুলিশের হয়রানির ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

তাঁরা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩নং কালচোঁ ইউনিয়নের তারাপাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের বিরুদ্ধে দুইটি গায়েবী মামলা দায়ের করেছেন ওই গ্রামের প্রভাবশালী ঢাকার বাসিন্দা মো. আমির হোসেন।

এরইমধ্যে এ মামলায় প্রতিবন্ধীদের চাচা চাচা পাতিল বিক্রেতা মো. শহীদ আটক হয়ে কারাগারে গেছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে গায়েবী মামলার বাদী ঢাকার বাসিন্দা আমির হোসেন সাথে রোববার (২২ এপ্রিল) মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রভাবশালী মো. আমির হোসেন প্রথমে প্রতিবন্ধী পরিবারের মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নং ২৩) ও একই পরিবারের ৭ জনের বিরুদ্ধে চাঁদপুর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ আমির হোসেন গ্রামে থাকেন না, তিনি সাধারণত ঢাকায় থাকেব। আমির হোসেন অভিযোগে উল্লেখ করেন, তারাপাল্লা গ্রামের নিজ বসত ঘরের সামনে তাকে মারধর করা হয়।

কিন্তু বাড়ির বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে অনুসন্ধানে জানা যায় মামলায় উল্লেখিত ঘটনার দিনি তিনি বাড়িতে আসেননি। এমনকি ওইস্থানে তার কোনো বসত ঘরও নেই। মিথ্যা গল্প সাজিয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়।

এদিকে দুই প্রতিবন্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে গায়েবী দুই মামলা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক হোসেন প্রধানিয়া বলছেন, ‘আসামিপক্ষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী। চাচা বৃদ্ধ মোঃ শহীদ ফেরি করে তার জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমন একটি পরিবারকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেয়ায় এলাকাবাসী হতাশ। পুলিশও কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই ১৭ ফেব্রুয়ারি পাতিল বিক্রেতা মোঃ শহীদকে (প্রতিবন্ধীদের চাচা) আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বৃদ্ধ ফেরিওয়ালা শহীদের অনুপস্থিতিতে পরিবার প্রায় ২০ দিন অসহায় অবস্থায় না খেয়ে দিনাতিপাত করে।

এদিকে থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন শুনানির তারিখ ছিলো ৭ মার্চ। শহীদকে জেলে রাখার কৌশল হিসেবে আমির হোসেন বাদী হয়ে সাতজনকে আসামী করে চাঁদপুর আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করে। মিথ্যা অভিযোগে পুলিশের হয়রানিতে দুই পরিবার এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

মামলার প্রধান সাক্ষী বাদী আমির হোসেনের আপন ছোট ভাই মোঃ জেবুল হোসেন। তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন চাচা আব্দুর রব। ওই মোঃ জেবুল হোসেন মুঠোফোনে স্বীকার করেছেন তার ভাই আমির হোসেন গ্রামের বাড়িতে ওই দিন যায়নি। মারামারি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কবির হোসেন জানান, বাদী আমীর হোসেন দীর্ঘ দিন আমাদের কাছ থেকে বাড়ির সন্মূখভাগের দু’শতাংশ জমি এয়াজবদল করতে চান। আমরা তা দিতে আপত্তি জানালে ক্ষিপ্ত ও মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দায়ের করেন।

শারিরীক প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ মফিজ জানান, ‘আমির হোসেন জমি এয়াজবদলের বিনিময়ে আপোষের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। না হলে আমাদের সকলকে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দিচ্ছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল বারেক বেপারী জানান, ‘আমির হোসেনের সাথে প্রতিবন্ধী পরিবারের সম্পত্তিগত বিরোধ ছিল দীর্ঘ দিনের। ঘটনার দিন জমি মাপতে তিনি বাড়ীতে আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি না আসায় জমি মাপা বন্ধ ছিল। কি করে তাকে অভিযুক্তরা মারধর করবে।’

সাবেক মেম্বার মোঃ আব্দুল খালেক ও এলাকার আরেক বাসিন্দা মোঃ সুরুজ মিয়া বলেন, ‘ওই দিন কোন ধরনের মারামারির ঘটনা এলাকায় ঘটেনি। এবং বাদী মোঃ আমির হোসেনকে এলাকায় আসতে কেউ দেখেনি। কিভাবে এই ধরনের গায়েবী মামলা হয়Ñ আমরা সবাই হতাশ।’

জানতে চাইলে হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক বেলাল হোসাইন বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে অভিযোগ এজহারভুক্ত করা হয় এবং সেই আলোকে আমরা আসামী আটক করেছি।

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ এপ্রিল ২০১৯

Share