চাঁদপুরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুভাষ বিশ্বাস,শহরের আনাচ-কানাচ বাঁশির সুরে দর্শক মাতান তিনি। মুহূর্তের মধ্যেই তার এ মধুর বাঁশির সুর শুনতে হাজির শহরের পথচারী দর্শকরা। তাঁর বাঁশির সুরে মুগ্ধ করে হাজারো পথচারীকে।
কখনো ‘ও রে সম্পান্ওয়ালা তুই আমারে করলি দিওয়ানা, সালাম সালাম হাজার সালাম,এক নদী রক্ত পেরিয়ে, যাও পাখি বল তারে সে জেনো ভোলে না মোরে, হাম তোমারি হে, তোমারে সানাম, আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন।
এমন কয়কে ডজন গানের সুর বাঁশিতে তুলতে সক্ষম সুভাষ বিশ্বাস।
প্রতিভাবান এ বাঁশি বাদক কোন বিখ্যাত সুরকার নয়, তিনি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। জন্ম থেকে অন্ধ সুভাষ।বাবা হরলাল বিশ্বাস। ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কামান বাঁশি বাজিয়ে। দর্শকরা তার বাঁশির সুর শুনে যা দেন এতেই চলে তার টানা-টানির সংসার।
শহরের কালী বাড়ি, জোড়পুকুর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে বাঁশি বাজান তিনি। কর্মে অক্ষম এ মানুষটি জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বেছে নিয়েছে এ পেশা। শহরের আনাচ – কানাচ বাঁশি বাজিয়ে টাকা রোজগার করেন তিনি।
বাঁশি বাজানো শিখেছেন আপন চাচার কাছে। তার প্রকৃত বাড়ি ছিলো বরিশালে, সেখান থেকে পাড়ি জমান মেঘনাপাড়ের শহর চাঁদপুরে। তার বেশিরভাগ শ্রোতাই তার বাঁশির সুরের মূর্ছৃনায় মুগ্ধ হয়ে যায়। তার এই দুঃখ কষ্টের অংশীদার চার জন। তিন মেয়ে ও গৃহবধু।
তার মেয়েরা তার পথ চলতে সাহায্যে করেন । বড় মেয়ে রুমা তার পথ চলার সাথী। গরীব হলে যা হয়,যে বয়সে হাতে বই থাকার কথা সে বয়সে বাবার সাথে সংসারের বোঝা টানতে ব্যস্ত।
বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা এনে শ্রোতাদের আনন্দ দিতে পারলেও সেই দৃষ্টিহীন মানুষটির নেই একবিন্দু আনন্দ। বয়সের ভারে দিন দিন ই নূয়ে পড়ছে তার মাথা। শরীরের শক্তি লোপ পেতে শুরু করেছে। জীবন সংগ্রামে অনেকের আনন্দের কেন্দ্রবন্দিু হতে পারলে ও, নিজের জীবনটা বিষাদে ভরা।
তাই মাঝে মাঝে দুঃখের সুরও ভেসে উঠে, ‘আর কতোকাল কান্দাবিরে দয়াল আর কতকাল কান্দাবি – গেলো না আমার দুঃখের ই কপাল।’
কিন্তু তাতেও বদলায়নি সুভাষ বিশ্বাসের জীবনের গল্প, এখনো বাঁশি বাজিয়ে টাকা তুলে জীবিকা চলে তার ও তার পরিবারের।
স্বপ্ন দেখেন একদিন বড় অনুষ্ঠানে, বড় কোন শিল্পির গানের তালে সুর তুলবেন বাঁশিতে। তার স্বপ্ন সত্যি হয় কি না জানি না। তবে তাকে যে একটি সুযোগ দিলে প্রতিভা বিকশিত হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন ভিক্ষার চেয়ে কর্ম করার সম্মান অধিক।
করেসপন্ডেন্ট
২৮ অক্টোবর, ২০১৮