বাবা ছিলেন রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশের উত্তাল সময়ে তার জন্ম, ষাটের দশকে। যখন তিনি একটু একটু বুঝতে শিখেছেন, তখন সময়টা ছিল গণঅভ্যুত্থানের। সেই সময়ে তাদের বাড়িতে গ্রামের ছেলেরা, রাজনৈতিক কর্মীরা পোস্টার, ফেস্টুন লিখছে। লোকের আনাগোনা, সারাক্ষণ রাজনৈতিক আলোচনার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হবেন। সে অর্থে বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে তার পদচারণা। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম, তিনি ডা. দীপু মনি।
চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার স্বপ্ন ও সফলতা নিয়ে লিখেছেন রিফাত কান্তি সেন-
একজন ডা.দীপু মনি:
সবসময়ই তার মুখে মিষ্টি হাসি লেগেই থাকে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি ১৯৬৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদের ঘর আলো করে জন্ম নেয়া শিশুটিই আজকের ডা.দীপু মনি। দেশ-বিদেশে সমানভাবে আলো ছড়িয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। চাঁদপুর থেকে রাজধানীসহ সবখানেই তার রাজনৈতিক পদচারণায় মুখরিত। কখনো তিনি প্রতিহিংসার শিকার হননি। তার কথা বলার ভঙ্গি বেশ গোছালো।
শৈশব:
দুরন্তপনা তেমন না থাকলেও বই পড়তে ভালো বাসতেন। মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ছিলেন এক সময়কার তুখোড় বিতার্কিকও। ঘুরে বেড়াতে ভালো বাসতেন। তবে কখনোই স্কুল পালাতেন না। পড়াশোনার বেলায় বেশ সচেতন ছিলেন। শৈশবটা গ্রামের মানুষের সাথেই বেশি কেটেছে তার। পরিবারের মধ্যে ভাই-বোন দু’জনই ছিলেন মেধাবী। যেহেতু রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা তার; সেজন্য রাজনীতিকেই জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছেন।
কর্মজীবন:
একাধারে রাজনীতিবিদ, চিকিৱসক, সমাজসেবক, বিতার্কিক- এমনকি লেখকও। এ পর্যন্ত দু’টি বইও লিখেছেন। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেও পেশা হিসেবে তার নামের পাশে রয়েছে চিকিৎসক ও আইনজীবী।
রাজনৈতিক জীবন:
তিনি ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি। এছাড়া বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার তার কাঁধে। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
নারীদের নিয়ে ভাবনা:
তার মতে, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে কোথায় নেই নারী? সশস্ত্র বাহিনী, পাইলট, ফাইটার পাইলট, আদালত, দূতাবাস, সচিব, এসপি, ডিসি, ইউএনও- সবখানেই নারীর জয়জয়কার। ১৯৯৬ সালের আগে নারীর এমন জয়জয়কার ছিল না। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৯৯৭ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালা করেন। তার মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শতকরা ৩৩ ভাগ আসন নারীদের জন্য বরাদ্দ করেন। তিনি বলেন, ‘রাতারাতি সাড়ে ১২ হাজার নির্বাচিত নারী স্থানীয় পর্যায়ে পেয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্পিকার, কৃষিমন্ত্রী নারী পেয়েছি আমরা। এককথায় বলতে হয়, নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তাদের আর আটকে রাখা যাবে না।’
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী:
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ দেশের বাইরেই বেশি। এজন্য তাকে বিশ্বের অনেক দেশে যেতে হয়েছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটি হতদরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। এছাড়া সাংবাদিক নির্যাতন, নারী নির্যাতন, জঙ্গিবাদ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বদনামকে দূর করে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য চেষ্টা করেছেন তিনি। বিশ্বের মানুষের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরেছেন। দেশের আসল ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তাই বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি এখন অনেক উঁচুতে।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড:
সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মেঘনার ভাঙনকবলিত চাঁদপুরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নতি হয়েছে। তার হাত ধরে মেরিন একাডেমি, পাসপোর্ট অফিস, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। এছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। এমনকি মেডিকেল কলেজে ভর্তিও শুরু হয়েছে। রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এমন অসংখ্য ছোট-বড় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। নৌ-বন্দর হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। চাঁদপুরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
পরিকল্পনা:
চাঁদপুর নিয়ে বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে তার। বেদখল খালগুলো দখলমুক্ত করে হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তুলতে চান তিনি। এতে পর্যটকদের মিলনমেলা হবে। পর্যটনে ব্যাপক উন্নতি হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চাঁদপুরে বড় কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে তার। শিগগিরই একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার করার ইচ্ছা রয়েছে। এছাড়া একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল করারও ইচ্ছা আছে।’ (জাগো নিউজ)
বার্তা কক্ষ
৩১ ডিসেম্বর,২০১৮