চিত্রশিল্পী, নকশাবিদ, ভাস্কর ও শিল্পপতি নিতুন কুন্ডু ১৯৩৫ সালের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু,মাতা বীণাপাণি কুন্ডু। নিতুন কুন্ডু সিনেমার ব্যানার এঁকে নিজের আয়ে শিক্ষা অর্জন করেন।
১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকার তৎকালীন আর্ট কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সালে চিত্রশিল্পে স্নাতক সমমানের পাঁচ বছরের কোর্স সমাপ্ত করেন। ষাটের দশকের স্বাধিকার আন্দোলনে বামপন্থি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা ছিল নিতুন কুন্ডুর। নিতুন কুন্ডু পরে ঢাকার মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে যোগ দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে তথ্য ও প্রচার বিভাগে নকশাবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ে তার আঁকা ‘সদাজাগ্রত বাংলার মুক্তি বাহিনী’-সহ কয়েকটি পোস্টার মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জোগায়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে ‘অটবি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা বর্তমানে দেশের একটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। চিত্রশিল্পী হিসেবে ঢাকা (১৯৬৫, ১৯৬৬), চট্টগ্রাম (১৯৬৬) ও রাজশাহীতে (১৯৬৮) চারটি একক চিত্রপ্রদর্শনী করেছিলেন নিতুন কুন্ডু।
এছাড়া দেশে-বিদেশে বহু উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ শিল্পী তেলরং, জলরং, অ্যাক্রিলিক, এচিং, সেরিগ্রাফ, পেনসিল বা কালিকলম মাধ্যমে চিত্র রচনা করেন।
নিতুন কুন্ডু নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে রয়েক ‘মা ও শিশু’ (১৯৭৫),‘সাবাস বাংলাদেশ’,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২),‘সাম্পান’,চট্টগ্রাম বিমানবন্দর (২০০১)। এছাড়া রাজধানীর ‘সার্ক ফোয়ারা’ও‘কদম ফোয়ারা’ দুটি তার নির্মিত।
ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হল, হোটেল শেরাটন ও গুলশান জনতা ব্যাংকের ম্যুরাল তার করা। একুশে পদক,জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ,এশিয়া কাপ ক্রিকেট পুরস্কার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ি পুরস্কারসহ জাতীয় পর্যায়ের বহু পুরস্কার-পদক-ট্রফি-ক্রেস্ট-মেডেলের নকশাকার তিনি।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য তিনি জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার (১৯৬৫) এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’(১৯৯৭) লাভ করেন।২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন নিতুন কুন্ডু।
বার্তা কক্ষ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯