বিশেষ সংবাদ

স্ত্রীকে হত্যার পর ফেসবুকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখলেন চিকিৎসক স্বামী

দেশের বাইরে বেড়াতে গিয়ে সাবেক স্ত্রীকে হত্যার পর সাত মাস সে খবর চেপে রেখেছিলেন এক চিকিৎসক। সন্দেহ এড়াতে সাবেক স্ত্রীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টও চালু রেখেছিলেন তিনি।

তবে শেষ রক্ষা হলো না। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরে। অভিযুক্তের নাম ধর্মেন্দ্র প্রতাপ সিংহ। শল্য চিকিৎসক হিসেবে গোরক্ষপুরে বেশ নাম ডাক রয়েছে তার। একটি নার্সিংহোমও চালান। দুই সঙ্গী প্রমোদ কুমার সিংহ ও দেশদীপক নিষাদসহ গত শুক্রবার দাউদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, মৃত নারীর নাম রাখী শ্রীবাস্তব ওরফে রাজলক্ষ্মী। বিছিয়ার বাসিন্দা তিনি। ২০০৬ সালে বিবাহিত শল্য চিকিৎসক ধর্মেন্দ্র প্রতাপের সঙ্গে আলাপ তার। অল্পদিনের মধ্যে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। শাহপুরে তাকে একটি ফ্ল্যাটও কিনে দেন ধর্মেন্দ্র। গোপনে ২০১১ সালে বিয়েও করেন দু’জনে। কিন্তু সব কিছু জানতে পেরে যান ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী ঊষা সিংহ। স্বামীকে ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেন তিনি।

এর পর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মণীশ সিংহ নামে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন রাখী। তবে দ্বিতীয় বিয়ের পরও ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার।

চলতি বছরের জুনে স্বামী মণীশের সঙ্গে নেপাল বেড়াতে যান রাখী। জানতে পারেন বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে আসছেন ধর্মেন্দ্রও। তাই তড়িঘড়ি স্বামীকে ফেরত পাঠিয়ে দেন তিনি। নিজে থেকে যান পোখরায়।

তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেন ধর্মেন্দ্র ও তার সঙ্গীরা। তার পর পাহাড়ের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। রাখীকে খুন করে তিনজনই দেশে ফিরে যান।

এক সহচরের মাধ্যমে রাখীর ফোনটি অাসামে পাঠিয়ে দেন ধর্মেন্দ্র। যার মাধ্যমে রাখীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালু রাখেন তিনি। নিয়মিত আপডেটও দিতে থাকেন, যাতে মনে হয় অাসামে রয়েছেন রাখী।

কিন্তু মেয়ের হদিশ না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেন রাখীর পরিবারের লোকজন। প্রথমে দ্বিতীয় স্বামী মণীশের উপরই সন্দেহ ছিল পুলিশের। তার ফোনের রেকর্ডও খতিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু উত্তর প্রদেশ পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী বাহিনী সিট তদন্তের ভার নিলে দেখা যায়, ওই সময় নেপালে ছিলেন ধর্মেন্দ্রও। তাতেই তদন্ত অন্য দিকে মোড় নেয়।

তদন্তকারীদের একটি দল নেপালের পোখরায় গেলে রাখীর মরদেহ উদ্ধারের কথা নিশ্চিত করে সেখানকার পুলিশ। পরে সেটি রাখীর মরদেহ বলে শনাক্ত করা যায়। তার পরই ধর্মেন্দ্র প্রতাপকে আটক করে পুলিশ।

লাগাতার জেরার মুখে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়েন ধর্মেন্দ্র। টাকা ও সম্পত্তির জন্য হুমকি পাচ্ছিলেন বলেই সাবেক স্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

বার্তা কক্ষ
২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

Share