ব্যাপক ধ্বংসাত্মক শক্তি নিয়ে উড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বিস্তার নিয়ে এ ঝড় শুক্রবার দুপুর নাগাদ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাসে এমনটিই বলা হয়েছে। আর যদি উত্তরমুখী গতিপথ ধরে রাখে, তবে কিছুটা দুর্বল হয়ে শনিবার সকালে বাংলাদেশের সীমানায় হানা দিতে পারে ফনি।
‘ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।’
তিনি বলেন, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
‘উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।’
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতেহ ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০-১১০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
যে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ফনির তাণ্ডবের শঙ্কা, সেখানে ১০ কোটির বেশি মানুষ বাস করেন। এতে আসন্ন দুর্যোগ মোবাবেলায় বুধবার থেকেই বিপুল প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বাংলাদেশ।
ইতিমধ্যে ভারতীয় রাজ্য উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কিছু জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এ দুই রাজ্য ছাড়াও বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে চার ও সাত নম্বর হুশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের খবরে বলা হয়েছে, বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি বৃহস্পাতিবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে হয়ে শুক্রবার মে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।
আবহাওয়া ডেস্ক
২ মে ২০১৯