Home / উপজেলা সংবাদ / হাজীগঞ্জ / দিনভর হাজীগঞ্জ রামগঞ্জ সড়কে ওড়ে ধূলাবালি জনদুর্ভোগ চরমে
দিনভর হাজীগঞ্জ রামগঞ্জ সড়কে ওড়ে ধূলাবালি জনদুর্ভোগ চরমে

দিনভর হাজীগঞ্জ রামগঞ্জ সড়কে ওড়ে ধূলাবালি জনদুর্ভোগ চরমে

সড়কে সার্বক্ষণিক ধূলি ওড়ার কারণে বহু বছর ধরে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার সময় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ওই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীসহ কয়েক হাজার এলাকাবাসীকে একই সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কলেজ, হাইস্কুল আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল সড়কের মুখে বালুমহলের বড় বড় ট্রাকে করে বালু পরিবহনের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সরজমিন আর স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, হাজীগঞ্জ বাজারস্থ বিশ্বরোড চৌরাস্তা এলাকা থেকে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) সড়ক। এ সড়কের হাজীগঞ্জ বাজার থেকে মাত্র ৫শ’ গজ দক্ষিণে ডাকাতিয়া নদী। ডাকাতিয়া নদীর মধ্যে রয়েছে হাজীগঞ্জ সেতু। এ সেতুর দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫/২০টি বালুমহল। এসব বালুমহলের বালু পরিবহনের একমাত্র বাহন বিভিন্ন আকৃতির ট্রাক। প্রতিদিন প্রতি সময় বালু নিয়ে এসব ট্রাক হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মূল সড়কের কোলঘেঁষে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কে ওঠে। কলেজের মূল সড়কের শত গজ দক্ষিণে রয়েছে রান্ধুনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়। আর সিকি কিলোমিটার দূরে রয়েছে হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, রান্ধুনীমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি কিন্ডারগার্টেন, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অবস্থান। হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সড়ক ধরে উপরোক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীসহ কয়েক গ্রামের আমজনতাকে চলাচল করতে হয়।

সরজমিনে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের কোলঘেঁষে গড়ে উঠা বালুমহলের ট্রাকগুলো ডিগ্রি কলেজের সড়কের মুখ ব্যবহার করতে গিয়ে বালু পরিবহনকারী ট্রাকগুলো অতি লোডের কারণে বালু পড়ে সড়কে এমন দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতি মুহূর্তে সড়কে বালু পড়ার কারণে সে বালু বৃষ্টিতে কাদা আর রোদে বালুর আস্তর জমে বাতাসে উড়িয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ধূলিঝড়ের মতো সৃষ্টি হয়। উড়ন্ত এ ধূলির কারণে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী আর পরিবহনের যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে।

হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানান, হাজীগঞ্জ সেতু থেকে শুরু হয়ে রান্ধুনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম অংশ প্রায় ৬/৭ গজ পথ আমাদেরকে উড়ন্ত বালুর মধ্য দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। বালুর কারণে কখনো আমরা হেঁটে ওই এলাকা অতিক্রম করতে পারি না। অটো-টেম্পোতে উঠলে একই অবস্থা। নাকে-মুখে টিস্যু চেপে ধরে পরিত্রাণ কিছুটা পাওয়া গেলেও শরীরে আর মাথায় বালুর আস্তর জমে একাকার হয়ে যায়।

একই সুরে সুর মিলিয়ে রান্ধুনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা, মেহজাবিন আর উম্মে সালমা কথা বললেন। শিক্ষার্থী উম্মে সালমা জানান, যেদিন উত্তরের বাতাস বয়, সেদিন বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। ঢাকার বাতাসে যেমনি শীসা থাকে, তেমনি আমাদের বিদ্যালয়ের বাতাসে বালু থাকে।

হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও রান্ধুনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি স্থানীয় বাসিন্দা মুন্সী মোহাম্মদ মনির জানান, বালু ব্যবসায়ীদের জন্যে বর্তমান সড়কটি বাদ দিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরির একটি প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছিল। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ীর অসহযোগিতার কারণে বর্তমানে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে।

হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মাসুদ আহম্মদ জানান, বালুমহলের বালু পরিবহনের কারণে কলেজের সড়কের মুখের সাইনবোর্ডটি পর্যন্ত বালিতে চাপা পড়ে গেছে। বালু পরিবহনের জন্যে কলেজের সড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প সড়ক তৈরির জন্যে বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ে প্রায় ১ বছর পূর্বে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা ইউএনও স্যারও জানেন। বিষয়টি এখনো সমাধান না হওয়ার কারণে বালুর যন্ত্রণা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী আর এলাকাবাসীর মুক্তি মিলছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া জানান, বালু পরিবহনের জন্যে বর্তমান সড়ক বাদ দিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরি না করা পর্যন্ত নিয়মিত উড়ন্ত বালুতে পানি ছিটানো, বর্ষায় ২/১ দিন পর পর কাদা সরানো, ডিগ্রি কলেজের সড়কের মুখে বালুমহলের মালিকদের পক্ষ থেকে লোক নিয়োগের ব্যবস্থা আমি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কোনো পক্ষই যোগাযোগ রাখেনি।

বার্তাকক্ষ
১১ মার্চ ২০১৯