চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নে ইলিশ জেলেদের জাটকা রক্ষা কর্মসূচির চাল নিয়ে নানা অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে।
এ ইউনিয়নে জেলেদের চাল আত্মসাত, গোপনে বাজারে বিক্রিসহ চেয়ারম্যান-মেম্বারা একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তীর ছুঁড়ছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে শনিবার (২০ এপ্রিল) মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার পক্ষের লোকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন।
অপরদিকে আজ (২১ এপ্রিল) পরিষদের ৩ নারী ইউপি সদস্যসহ ৮ মেম্বার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে উপস্থিত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
ইউপি মেম্বার আবুল খায়ের বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব ১০ বস্তা চাল বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। জেলেদের চাল নিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের এই চালবাজিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, আপনারা সমন্বয় করে কাজ করলে এই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হতো না। আপনারা নিজেরা সমন্বয় করছেন না, মাঝখান থেকে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য’র সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ইউপি সদস্য আবুল খায়ের, আবুল কালাম, বাশার, হালিম বেপারী, কালু মিজিম এবং দেলু বেপারী, নারী ইউপি সদস্য খুরশিদা বেগম. রাশিদা বেগম, শামিমা বেগম। পরে তারা নব-নির্বাচিত সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ানের কাছে অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,‘হানারচর ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ডের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ’ এনে ১১জন ইউপি সদস্য একটি বিবৃতি দেয়। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই বিবৃতিতে ১১জন ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ আনেন।
এদিকে পত্রিকায় এমন সংবাদ প্রকাশের পর ‘হানারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্য আ. ছাত্তার রাঢ়ী এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে স্থানীয় ১০/১২জন গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ইউপি সদস্যদের একাংশের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদে মতবিনিয় সভা করেন।
সভায় সাত্তার রাঢ়ী জানান,‘আমার ইউনিয়নে সর্বমোট ২৩শ’ ৮৭ জেলে রয়েছে। আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নতুন করে আরো ৬শ’ কার্ড দেওয়া হয়েছে। আমি কখনো কাউকে কোন প্রকার চাল কম দেইনি, কোন অনিয়ম করিনি। তারপরেও হয়তো চাল দিতে গেলে কোন না কোন ভুল ত্রুটি হতে পারে। সকল ইউপি সদস্যদের অবহিত করে এবং ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করা হয়।
এবার চাল দেয়ার সময় দেখি ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল খায়ের একই নামে দুটি জেলে কার্ড করিয়েছেন এবং ৭ নং ওয়ার্ডেও একই ভাবে একই ব্যাক্তির নামে দুটি জেলে কার্ড রয়েছে। বিষয়টি আমার চোখে পড়ায় আমি তাদের চাল দেয়া স্থগিত করি। তাছাড়া ইউপি মেম্বার আবুল খায়ের জেলে কার্ড দেয়ার নামে জেলেদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এজন্যে ইউপি সদস্য আবুল খায়ের আমার বিরুদ্ধে দুর্নাম ছড়াাচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য আবুল খায়ের বলেন,‘আমি একসময় জেলে কাজ করেছি। আমি আমার কার্ডে চাল গ্রহণ করছি। জেলে কার্ড করে দেয়ার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগের বিষয় তিনি অস্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তিনি আমার নামে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছেন।
এ ইউপি মেম্বার উল্টো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান চাল নিয়ে অনেক অনিয়ম করেন। তিনি দোকানে চাল বিক্রি করেন, চাল নিয়ে ধরাও খেয়েছেন। চেয়ারম্যান যেসব জেলেদের চাল দেয়নি তারা বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করবে।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে হানারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. ছাত্তার রাঢ়ী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,আমার বিরুদ্ধে চাল বিতরণ বা বিক্রির যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম
২১ এপ্রিল,২০১৯