স্বাস্থ্য সেবাকে প্রান্তিক পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা কমিউনিটি ক্লিনিক। এ প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও সেবামূলক করার জন্য হাতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। নতুন আইন পাশের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড। হাতে নেয়া হয়েছে নষ্ট হওয়া ও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া ১শ ৫০ প্রতিষ্ঠানকে নতুন কাঠামোতে তৈরি করার কার্যক্রম।
এজন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে ভবনের ডিজাইনও। এতে রয়েছে চারটি রুম ও দু’টি বাথরুম। থাকছে গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা। আর এসব প্রতিষ্ঠানে জনবল বাড়তে শিগগিরই ১২ হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়া বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সারা দেশে ১৪ হাজার ৮৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ পর্যন্ত ক্লিনিকগুলো থেকে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৬২ কোটি ৫৭ লাখ। বর্তমানে ১৩ হাজার ৮৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। আরও ১ হাজার ২৯টি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় সারা দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বছরে ১৮০ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এতে ৩২ প্রকার ওষুধ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাচ্ছেন ওয়ার্ড পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে নির্মাণ করা প্রষ্ঠিানের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন ও অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় দেড় শতাধিক। এসব প্রতিষ্ঠানকে নতুন ডিজাইনে নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই ভবনের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে থাকছে চারটি রুম ও দু’টি বাথরুম। থাকছে গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থাও। যাতে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার কমে যায়।
এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮২২ জনকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যার ৫৪ % নারী। এরমধ্যে ১ হাজার ৯৩৫ জন নারী সিএইচসিপিকে দেয়া হয়েছে সিএসবিএ প্রশিক্ষণ।
২০০৯-২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৩ হাজারের অধিক কমিউনিটি ক্লিনিকে এ পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে শিগগিরই আরও ১২ হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে নারীরা। যাতে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ানো যায়।
কমিউনিটি স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী জানান , দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবায় অত্যন্ত সহযোগী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবায় যে অগ্রগতি সেটি মূলত এ কমিউনিটি ক্লিনিক সেবার জন্যই সম্ভব হয়েছে। এ চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান , ১৯৯৮ সালের তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কিছু নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। টিনের চালা দিয়ে কোনোভাবে কার্যক্রম চলছে। সবমিলিয়ে এগুলোর সংখ্যা হবে প্রায় ১৫০টির মতো। এগুলো আমরা পুনরায় নতুন আঙ্গিকে তৈরি করবো। তবে এবারের ক্লিনিকগুলো ৪ রুম বিশিষ্ট হবে।
এছাড়া ভবিষ্যতে যতো কমিউনিটি ক্লিনিক হবে সব নতুন ডিজাইনেই করা হবে। গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে জরুরি প্রয়োজনে তাদের উপজেলা কিংবা জেলায় পাঠানোর প্রয়োজন হলে বাহনের ব্যবস্থাও করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, শীঘ্রই আমরা নতুন করে ১২ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের নিয়োগ দেবো। এক্ষেত্রে নারীদের বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে। যেমন পরীক্ষায় যদি কোনো পুরুষ প্রার্থী ২০ মার্ক পায় এবং নারী প্রার্থী ১৬ পায় সে ক্ষেত্রে নারী প্রার্থীকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কারণ দেশে সিজারিয়ানের সংখ্যা খুব বেড়ে গেছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিককে সন্তান প্রসবের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই। তাই নারীদের নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা যাবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে ৬ হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৯৮ সালের ২৮ জুন একনেক সভায় এটি অনুমোদন লাভ করে। পরে সরকার পরিবর্তন হলে ২০০১ সালে প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প পুনরায় চালু করে।
কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিসহ অংশগ্রহণ করছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫ শ’ কমিউনিটি গ্রুপ সদস্য এবং ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫শ’ কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সদস্য। এলাকাবাসীর জমি দান ও সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সরকারের কারিগরি সহায়তায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গড়ে উঠেছে। ঘরের কাছে স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প এখন বিশ্বের কাছে উদাহরণ।
বার্তা কক্ষ
২৪ জুন ২০১৯
এজি