Home / চাঁদপুর / বিভাগ হচ্ছে কুমিল্লা, অন্তর্ভুক্ত থাকছে চাঁদপুর
Comilla-Division

বিভাগ হচ্ছে কুমিল্লা, অন্তর্ভুক্ত থাকছে চাঁদপুর

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কুমিল্লা বিভাগ হচ্ছে। যাদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলাম তারা আসবে না। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চাঁদপুর থাকছে আমাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা চলছে। কুমিল্লা বিভাগ হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন ঘোষণার অপেক্ষায় কুমিল্লা বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লায় ৬২ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০তলাবিশিষ্ট নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কোনো কোনো নেতা আছেন যারা কথা শুনে ব্যথা বোঝেন। কিন্তু আমাদের নেতা হলেন এমন- যিনি মানুষের মুখ দেখলেই ব্যথা বোঝেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র একে-অপরের পরিপূরক। আইনের শাসন ছাড়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিকশিত হতে পারে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের তিন অঙ্গকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ কেএম সামছুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ মো. জহিরুল হক ও কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জেলা জজ আদালতের বিচারক ও আইন বিভাগের কর্মকর্তা এবং আইনজীবীসহ সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ৪ মার্চ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে বিভাগ করার ঘোষণা দেন।

প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মধ্যদিয়ে ১৯৬০ সালে জেলার মর্যাদা পায় কুমিল্লা। আশির দশক থেকেই কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। ওই সময় থেকেই বৃহত্তর কুমিল্লার কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং বৃহত্তর নোয়াখালীর নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর জেলার সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কুমিল্লা বিভাগের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে।

এ দাবিকে জোরালো করতে গণফোরাম ও পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন হয়ে কুমিল্লা গণদাবী পরিষদ নামে একটি সংগঠনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দিন মাস বছর গড়ায়। বিভাগের দাবিতে ওই ছয় জেলার মানুষ নানা কর্মসূচি পালন করেছে।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নোয়াখালী, ফেনি, ও লক্ষ্মীপুর জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠনের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে বিভাগ করার নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত দেন ।

ওই সিদ্ধান্তের প্রায় একমাস দশদিন পর একই বছরের ৪ মার্চ জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ করার ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর ছয়টি জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। বিভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজও চলতে থাকে। কুমিল্লা বিভাগ হবে এমন আনন্দের জায়গায় চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কুমিল্লার সাথে থাকলেও হঠাৎ বেঁকে বসে নোয়াখালী অঞ্চল।

তারা নিজেরাই এখন বিভাগ দাবি করে বসেছে। বিভাগের দাবি নিয়ে কুমিল্লা থেকে যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন বৃহত্তর নোয়াখালীর জনগণও এ দাবির প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে এসেছিল।

কিন্তু মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্ত ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর পাল্টা বিভাগের দাবি নিয়ে নোয়াখালী অঞ্চল ঘুরে বসে।

এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০১৫ সালের ১৩ জুন কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন হলে কুমিল্লা বিভাগের নাম কুমিল্লাই থাকবে। কুমিল্লা নামেই আমরা গর্ববোধ করি। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।’

উইকি সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগ অর্থাৎ বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল সমতট নামক প্রাচীন রাজ্য ত্রিপুরার অধীনে ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব শুজাউদ্দিন ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ত্রিপুরা দখল করে। ১৭৯০ সালে কোম্পানি শাসনামলে ত্রিপুরা নামের জেলার সৃষ্টি।

পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা থেকে আলাদা করে কুমিল্লাকে জেলা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। মুঘল আমলে এ এলাকা রোসনাবাদ এলাকা নামে সুপরিচিত ছিল। কুমিল্লা পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৯০ সালে সিটি কর্পোরেশন হয় ২০১১ সালে।

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
২৫ অক্টোবর, ২০১৮

Leave a Reply