Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে বৈধর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সিএনজি ও অটোবাইক চলাচল করছে
Chandpur-Janjot
ফাইল ছবি

চাঁদপুরে বৈধর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সিএনজি ও অটোবাইক চলাচল করছে

চাঁদপুরে সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইকের দৌরাত্ম্য এখন সীমাহীন পর্যায়ে। বৈধ-অবৈধর কোনো বালাই নেই। আর সড়কে চলাচলেও নিয়ম কানুনের কোনো তোয়াক্কা নেই। কাগজপত্রে সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইকের লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকলেও বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ দু’টি যান বৈধর সংখ্যা যা আছে, তার কয়েকগুণ বেশি সড়কে চলাচল করছে অবৈধভাবে।

এ সেক্টরটির যেনো কোনো নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবক নেই। চালকরা তাদের খেয়ালখুশি মতই পুরো শহর দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সিএনজি স্কুটারের ক্ষেত্রে বৈধর সংখ্যা যা রয়েছে তার দ্বিগুণ বেশি চলাচল করছে অবৈধভাবে। এটির লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকলেও কোনোটিই কিন্তু বসে নেই। ভুয়া নম্বর প্লেট লাগিয়ে সড়কে চলাচল করছে। অথচ সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে। আর যানজটের বিষয়টি তো স্পষ্টই।

অন্যদিকে অটোবাইক বা ইজিবাইক নামে ব্যাটারিচালিত যানবাহনটি কোনো বৈধ যানবাহনের মধ্যেই পড়ে না। তারপরও পৌরসভা থেকে যানবাহনটির লাইসেন্স যে পরিমাণ দেয়া আছে, তার কয়েকগুণ বেশি চলাচল করছে সড়কে। অর্থাৎ পুরো চাঁদপুর শহরে জালের মতো বিস্তৃত হয়ে আছে সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইক।

চাঁদপুর জেলা বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় বর্তমানে লাইসেন্সধারী সিএনজি স্কুটারের সংখ্যা হচ্ছে ৬ হাজার ৭শ’ ১। এই সংখ্যা প্রায় তিন বছর আগের। অর্থাৎ অফিসিয়াল কাগজপত্র অনুযায়ী সর্বশেষ লাইসেন্সধারী সিএনজি স্কুটারের সংখ্যা হচ্ছে এই পরিমাণ। অথচ পুরো জেলায় সড়কে চলাচল করছে এই সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি সিএনজি স্কুটার। খোদ জেলা বিআরটিএ কর্মকর্তাই এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বিআরটিএ চাঁদপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক শেখ মোঃ ইমরান জানান, চাঁদপুর সার্কেলে আমার প্রায় তিন বছর হলো। আমার সময়কালে শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যে একটি সিএনজি স্কুটারের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি। তাই বর্তমানে চাঁদপুর জেলায় লাইসেন্সধারী সিএনজি স্কুটারের সংখ্যা হচ্ছে ৬ হাজার ৭শ’ ১। তবে তিনি স্বীকার করেন সড়কে চলাচল করছে আরো অনেক বেশি সিএনজি স্কুটার, যেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্রই নেই।

তিনি অনেকটা আক্ষেপের সাথে বলেন, অবৈধ গাড়ি সড়কে চলাচল যাতে কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না, তখন আর লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রেখে লাভ কি? বরং লাইসেন্স দেয়া অব্যাহত থাকলে সব গাড়িই লাইসেন্সের আওতায় আসতো। তাতে বর্তমানের চেয়ে আরো দুই কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হতো। তিনি আরো জানান, আমি চাঁদপুরে যোগদান করার পর প্রথমদিকে গাড়ির লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন বাবদ বছরে রাজস্ব আদায় হতো প্রায় ৭ কোটি টাকা। আর এখন অর্থাৎ গত বছর আদায় হয়েছে ৯কোটি টাকা।

এখন অবৈধগুলো যদি লাইসেন্সের আওতায় আনা যায় তাহলে আরো কমপক্ষে ২ কোটি টাকা বেড়ে বছরে ১১ কোটি টাকা আদায় হবে। তিনি বলেন, সিএনজি স্কুটার নতুন করে লাইসেন্স দেয়া সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও অবৈধ গাড়ি চলাচল কিন্তু বন্ধ নেই। উপরন্তু সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ব্যাটারীচালিত অটোবাইকের বিষয়ে বিআরটিএ’র জেলার এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি কোনো বৈধ যানবাহনের আওতায়ই পড়ে না। তারপরও পৌরসভা থেকে এগুলোর লাইসেন্স দিচ্ছে আর সড়কেও চলাচল করছে।’

এদিকে চাঁদপুর পৌরসভার লাইসেন্স শাখা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা থেকে অটোবাইকের লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রয়েছে কয়েক বছর ধরে। বর্তমানে এর লাইসেন্স সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ২শ’। অথচ এর বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিদিন চাঁদপুর শহরজুড়ে অটোবাইকের বিচরণ থাকে অগণিত-অসংখ্য। সংখ্যার হিসেবে অনুমান করে বললে এর সংখ্যা পাঁচ হাজারকেও ছাড়িয়ে যাবে। পুরো শহরটাকে অচলাবস্থা করে রেখেছে এই অটোবাইক। পিঁপড়ার মতো কোথাও একটার পর একটা ছুটছে আবার কোথাও জটলা বেঁধে পুরো রাস্তা জুড়ে আছে এই অবৈধ যান অটোবাইক।

অসংখ্য অবৈধ অটোবাইক আর অবৈধ সিএনজি স্কুটারের সীমাহীন দৌরাত্ম্যে জনজীবনকে বিষিয়ে তুললেও সবাই শুধু চেয়ে চেয়েই দেখছে। মাঝেমধ্যে অভিযানের নামে যেনো জনগণের সাথে ঠাট্টা-মস্করা করা হয়ে থাকে। লোক দেখানো হাতেগোণা কিছু গাড়ি তখন আটক করা হয়।

লক্ষ্মণীয় যে, চাঁদপুর শহরে কী পরিমাণ অবৈধ সিএনজি স্কুটার ও অবৈধ অটোবাইক রয়েছে তা অনুমান করা গেছে সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী যখন রাস্তায় নেমেছে তখন। সেনাবাহিনী যে ক’দিন মাঠে সশস্ত্র টহলে ছিলো সে ক’দিন চাঁদপুর শহরের চিত্র ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। তখন রাস্তায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও খালি কোনো সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইক পাওয়া যেতো না। দিনে শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকা ছিলো। ভিন্ন রূপের এক চাঁদপুর শহর যেনো দেখা গেলো তখন।

এতো অংসখ্য সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইক তখন কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। যে অটোবাইকের মিছিলের কারণে শহরে হাঁটাই যেতো না, সে অটোবাইকের জন্যে সে সময় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও খালি পাওয়া যেতো না। তখনকার (সেনাবাহিনীর সময়) সে দৃশ্য দেখে বুঝার আর কোনো বাকি নেই যে, অবৈধ সব সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইক শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে নিরাপদ জায়গায়। চাঁদপুরবাসী সে অবস্থা সবসময়ের জন্যে দেখতে চায়।(চাঁদপুর কন্ঠ)

বার্তা কক্ষ
১০ ফেব্রুয়ারি,২০১৯