ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত আশপাশের ভবনগুলো। হতাহতের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। তারপরও বিস্ময়ের আঙুল তুলে অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদটি। যেন আগুনের এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডির সাক্ষি হয়ে আছে মসজিদটি। শোকাবহ ঘটনায় স্তম্ভিত অনেকেই ঘটনাস্থলে আসছেন। আর মসজিদটি দেখছে। কেউ কেউ বলছেন, মসজিদের মূল ফটকের সামনেই আগুনের সূত্রপাত। অথচ মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এ মহান আল্লাহর অপার রহস্য।
স্থানীয়রা জানান, শাহী মসজিদের মূল গেটের সামনে রাস্তায় একটি পিকআপ ভ্যানে থাকা সিলিন্ডার গ্যাস থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, মসজিদের সামনের অংশে কালো ধোঁয়ার চিহ্নহ্নহ্নহ্ন আর দু-একটি গ্লাস ফেটে যাওয়া ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
বুধবার রাতে মসজিদের সামনে রাস্তায় একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে কয়েকটি ভবন ও হোটেলে। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে একটি ভবনের বাসিন্দা জাভেদ জানান, জুমার নামাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও মসজিদের ভেতর মাদরাসা রয়েছে। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় মসজিদের ভেতরে অবস্থান করছিলেন ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম ও বেশ কিছু মাদরাসা ছাত্র। আগুনে তারা সবাই অক্ষত রয়েছেন।
একনজরে চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদ :
পুরান ঢাকার চকবাজার শাহী মসজিদ থেকে পশ্চিমে চুড়িহাট্টা এলাকায় পাঁচ রাস্তার মোড়ে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের অবস্থান। মসজিদে সংস্থাপিত শিলালিপি থেকে জানা যায়, সুবেদার শাহ সুজার সময়ে ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরি ১০৬০) মুহম্মদ বেগ এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
২০০৮ সালে মসজিদটির প্রাচীন চিহ্নের অবশিষ্টাংশের সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলে এটি একটি বহুতল বিশিষ্ট (বর্তমানে ছয়তলা) আধুনিক ইমারতে রূপান্তর করা হয়েছে। মসজিদটির উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে প্রশস্ত বারান্দা সংযোজন করা হয়েছে। আদিতে নির্মিত চৌচালা ছাদের পরিবর্তে বর্তমানে রয়েছে একটি সমতল ছাদ এবং এর ওপরে আরো দোতলা নির্মাণ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক আহমদ হাসান দানী তার ঢাকা বিষয়ক গ্রন্থে মসজিদটির মূল কাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন। ইমারতটির মূল ভূমি পরিকল্পনা ছিল আয়তাকার এবং এর বাইরের দিকে চার কোণে অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ নির্মাণের মাধ্যমে ইমারতটি মজবুত করা হয়েছিল। তবে মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার আগে এ বুরুজগুলো অপসারণ করা হয়েছিল।
মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে খিলানকৃত প্রবেশপথ ছিল। ভেতরের অংশে পশ্চিম দিকে ছিল তিনটি মিহরাব। মিনারের ওপরে আয়তাকার প্যানেল। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অষ্টভুজাকার এবং একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। কেবল কেন্দ্রীয় মিহরাবটিই সম্পূর্ণ মসজিদটি ভেঙে ফেলার পূর্ব পর্যন্ত টিকে ছিল।
চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদ এখন কেবল ইতিহাসের অংশ। কারণ বর্তমানে এটি একটি আধুনিক মসজিদ ভবন।
ইসলাম ডেস্ক
২২ ফেব্রুয়ারি,২০১৯