২০১৩ সালে প্রথম বার সুইডেনে জীবিত নারীর গর্ভাশয় আরেক জীবিত নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করে প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল। এ প্রক্রিয়ায় মোট ১১ বার সফলতা পান চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। সে ক্ষেত্রে মৃত নারীর দেহ থেকে গর্ভাশয় নিয়ে জীবিত নারীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সন্তান জন্মদানের সাফল্য আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার এক অভূতপূর্ব ঘটনা।
৫ ডিসেম্বর, বুধবার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৃত নারীর দেহ থেকে গর্ভাশয় নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল এক ব্রাজিলীয় নারীর শরীরে। পরে প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ে ভ্রূণকে লালন করে সেই নারী জন্ম দেন এক সুস্থ-সুন্দর কন্যা সন্তানের। এ ক্ষেত্রে তিনিই হলেন বিশ্বের প্রথম নারী, যিনি মৃতার গর্ভাশয় নিজের শরীরে প্রতিস্থাপন করিয়ে তা থেকে জন্ম দিলেন সন্তানের। ৩৫ সপ্তাহ তিন দিন গর্ভধারণের পর সিজারের মাধ্যমে ওই কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া হয়। জন্মের সময় বাচ্চাটির ওজন ছিল ২ কিলোগ্রাম ৫৫০ গ্রাম।
এ সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলোর গবেষক দলের প্রধান দানি এজেনবার্গ বলেন, ‘অঙ্গদাতা মৃত ব্যক্তি হলে পুরো প্রক্রিয়ার ঝুঁকি অনেকটা কম হয়। পাশাপাশি খরচও অনেকটা কমে যায়। কারণ, দাতা মৃত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা, তার দীর্ঘ অপারেশন করার ঝক্কি থাকে না। সে ক্ষেত্রে জীবিত দাতার ক্ষেত্রে কাজটা বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।’
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ ফেটে মৃত্যু হয়েছিল ৪৫ বছর বয়সী এক নারীর। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টার অপারেশনের মাধ্যমে ওই মহিলার দেহ থেকে গর্ভাশয় বের করা হয়।
তার গর্ভাশয়ের ওজন ছিল ২২৫ গ্রাম। ওই নারী এর আগে তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। ব্রাজিলীয় যে নারীর দেহে ওই গর্ভাশয়টি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, তার বয়স ছিল ৩২। জন্ম থেকেই তার দেহে গর্ভাশয় ছিল না, চিকিৎসার ভাষায় যাকে বলা হয় ‘মেয়ার রকিটান্সকি কাস্টার হাউজার সিনড্রোম’।
গর্ভাশয় প্রতিস্থাপনের পুরো প্রক্রিয়াটি ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, গর্ভাশয় প্রতিস্থাপনের প্রায় পাঁচ মাস পর গ্রহীতা মহিলার শরীরে অঙ্গ প্রত্যাখ্যানজনিত কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। আলট্রা সাউন্ড স্ক্যানের রিপোর্টও ছিল স্বাভাবিক।
এমনকি তার নিয়মিত ঋতুস্রাবও হচ্ছিল। এই লক্ষণগুলো দেখে চিকিৎসকরা কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। ব্রাজিলীয় ওই নারীর গর্ভাশয় না থাকলেও ডিম্বাশয় ছিল।
তাই তার ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে ‘আইভিএফ’ বা ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ে রোপণ করা হয়েছিল ভ্রূণ। গর্ভাশয় প্রতিস্থাপনের সাত মাস ১০ দিন পর ভ্রূণ রোপণের কাজটি হয়েছিল।
ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এর আগে মৃত মহিলার গর্ভাশয় প্রতিস্থাপন করে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আমেরিকা, চেক প্রজাতন্ত্র ও তুরস্কের চিকিৎসক-গবেষকরা। কিন্তু তারা তাতে সাফল্য পাননি। অবশেষে ব্রাজিলের সাও পাওলোর চিকিৎসকরা তাতে সাফল্য অর্জন করলেন।
বার্তা কক্ষ
৬ ডিসেম্বর, ২০১৮