চাঁদপুর শহরে জগন্নাথ দেবের ৩টি রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুরাণবাজার জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান।
এদিন পুরাণবাজার ঘোষপাড়ার নবনির্মিত ইস্কন মন্দির থেকেও জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা বের করা হয়। এই রথযাত্রায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২০ জন ভক্ত এখানে অংশগ্রহণ করে।
এই রথযাত্রায় চাঁদপুর শহর ছাড়াও নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, ফেনি সহ আশেপাশের জেলা থেকেও কয়েক হাজার ভক্ত এসে সমাগম ঘটায়। জগন্নাথ মন্দিরের রথটি শহরের নতুন বাজার কালী বাড়ি মন্দিরে ও ইস্কনের রথটি নতুনবাজার ঘোষপাড়া মন্দিরে টেনে আনা হয়।
জগন্নাথ মন্দিরের রথ উদ্যাপনের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক সমর কান্তি সাহার সভাপতিত্বে ও কার্তিক সরকারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেন, আজ সারা দেশে আনন্দ ঘন পরিবেশে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উদ্যাপিত হচ্ছে। যারা নতুন প্রজন্ম তাদেরকে রথ সম্পর্কে বুঝাতে হবে। আমরা মানব সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। প্রকৃত মানুষ হতে কী করতে হবে প্রজন্মকে তা বুঝাতে হবে।
এই রথযাত্রা অনুষ্ঠান উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে সে অনুষ্ঠান করতে হবে উপভোগযোগ্য। পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার করে বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে দিলে প্রজন্ম এই রথ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারবে। অনুষ্ঠান করার লক্ষ্যে সুন্দর স্থান নির্মাণ করতে হবে। অনুষ্ঠানের স্থলে সকলকেই আসতে বাধ্য করা প্রয়োজন। তবেই মানুষের সমাগম বৃদ্ধি পেলে এই রথযাত্রার অনুষ্ঠানের সফলতা আসবে। এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কোন হঠকারীরা যাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। চাঁদপুর শহর হলো সম্প্রীতির বন্ধন। এখানে সাম্প্রদায়িক কোন হানাহানি নেই। সকল ধর্মের মানুষ আনন্দ ঘনভাবে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বিপিএম, পিপিএম বলেন, সারা দেশের ন্যায় আনন্দ উদ্দীপনা চাঁদপুরেও চলছে। চাঁদপুর জেলায় ১৪টি রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চাঁদপুরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। প্রশাসন সবসময় আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। একজন মুসলিমের অংশগ্রহণ যেমনি ছিল তেমনি একজন হিন্দু ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ কম ছিল না।
তিনি আরও বলেন, গত কিছুদিন পূর্বে পুরাণবাজার দাসপাড়ায় যা ঘটেছে সরকার আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আমরা তাদের সর্বাত্মক শাস্তির ব্যবস্থা করব। প্রশাসন সবসময় আপনাদের পাশে আছে। আমি ২০০৭ সাল থেকে রথ টেনেছি। ২০১০ সালে শুধু টানতে পারিনি। এসব রথের অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। আপনারা যদি বিশ্বাস করেন রথ টেনে আপনারা পুন্যার্থী হন তাহলে আমিও আপনাদের সাথে পুনার্থী হয়েছি।
পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি প্রতি ব্ছর এখানে আসি। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা সত্যিই পবিত্র। পৃথিবীর কোথাও এমন কোন দেশ নেই ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছে শুধু একটি মাত্র দেশ ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছে সেটি হলো পাকিস্তান।
তারা সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র করতে চেয়েছে বাংলাদেশকে। যা বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন করে। সেদিন সকল ধর্মের মানুষ যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করে। আর স্বাধীনতার মাধ্যমে এদেশকে অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। এখানে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্ম কর্ম করে যার যার ধর্ম অনুসারে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এদেশ এগিয়ে যাচ্ছে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে। পৃথিবীতে কোন ধর্মে লেখা নেই ধর্ম নিয়ে হানাহানি হোক। সকল ধর্মে উল্লেখ রয়েছে শান্তির কথা।
এ সময় উদ্বোধকের বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়। প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের অধ্যক্ষ কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী। আরও বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, সহ-সভাপতি নরেন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাড. বিণয় ভূষণ মজুমদারপ্রমুখ।
পরে অতিথিগণ পুরাণবাজার জগন্নাথ মন্দিরের রথ টেনে রথযাত্রার সূচনা করেন।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ জুলাই ২০১৯