গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবার ঈদযাত্রা হয়েছে অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক। নতুন তিনটি সেতু চালু হওয়ার ফলে স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ও ফিরতে পেরেছে মানুষ।
শুক্রবার রাতে ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে আসার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইটি কর্মকর্তা আশেকুল মুরসালিন।
শনিবার অফিসে এসে তিনি সহকর্মীদের বলেন, ‘অবাক করার বিষয় যে, মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছে গেছি। আমি রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম থেকে বাসে উঠি। পথে কুমিল্লায় ২০ মিনিটের যাত্রাবিরতি ছিল। রাত ২টার দিকে আমি রাজধানীতে পৌঁছাই। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে মাত্র ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মতো সময় লেগেছে, যা অবিশ্বাস্য!’
তিনি বলেন, অথচ এক মাস আগেও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অথবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাত্রা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। মাত্র দুই মাস আগেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে মেঘনা ও গোমতী সেতু পার হতেই প্রায় ৭ ঘণ্টা সময় লেগেছিল।
মুরসালিন বলেন, ঈদের আগে মহাসড়কে নতুন তিনটি সেতু খুলে দেয়ার ফলে ভ্রমণের সময় অনেক কম লেগেছে। এছাড়া ঈদের সময় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুরোপুরি যানজটমুক্ত ছিল।
তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিনটি সেতুর উদ্বোধনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন উল্লেখযোগ্যভাবে ভ্রমণের সময় কমিয়েছে।
মহাসড়কগুলোতে এই উন্নয়ন ঈদের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া মানুষের কাছে অবাক করার মতো বিষয় ছিল। সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপকালে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কারণ দীর্ঘ সময় পর তারা মহাসড়কগুলোতে স্বস্তিতে ভ্রমণ করতে পেরেছেন।
মহাসড়কগুলোতে যানবাহন যাতে বেপরোয়াভাবে না চলে এবং গতির সীমা অতিক্রম না করে সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
গত ১৬ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ৩৯৭.৩ মিটার দীর্ঘ চারলেনের দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
গত ২৫ এপ্রিল গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও দ্বিতীয় গোমতি সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঈদে ঘরমুখো আরেক যাত্রী চাঁদপুরের রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ বলেন, চাঁদপুর থেকে নিজ প্রাইভেট গাড়িতে তিনি মাত্র দুই ঘণ্টায় রাজধানীতে এসেছেন। অথচ মাত্র দেড় মাস আগেই ঢাকা থেকে চাঁদপুর যেতে প্রায় নয় ঘণ্টা সময় লেগেছিল। ফেরার সময়ও একইরকম সময় লেগেছিল।
তিনি বলেন, এক মাস আগেও ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার গতিতে দুই লেনের তিনটি পুরান সেতু পার হওয়াটা অনেক কষ্টকর ছিল। এখন আমরা ১০০ কিলোমিটার গতিতে নতুন সেতু পার হতে পারছি। তাই নতুন সেতুগুলো মহাসড়কে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
মাইক্রোবাসের চালক শামীম বলেন, ঢাকা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেনী যেতে তার মাত্র পৌনে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। কারণ মহাসড়কে কোনো যানজট ছিল। ফেনী থেকে শনিবার রাজধানীতে আসতে মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
বুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সারোয়ার জাহান বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো খবর যে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিনটি নতুন সেতু নির্মাণের ফলে ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তবে চালকরা যাতে সীমার মতো গাড়ি চালায় সেটি কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
তিনি বলেন, চালকরা যাতে বেপরোয়া গাড়ি না চালায় সেজন্য মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে হাইওয়ে পুলিশকে দৃঢ় অবস্থান নেয়া উচিত।
আরেক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘মানুষ এখন নিঃসন্দেহে নতুন সেতুগুলোর সুফল ভোগ করছে। কিন্তু আমাদের মহাসড়ক এবং বেশিরভাগ যানবাহন গতির সাথে নির্বিঘ্নে ড্রাইভিং করার জন্য উপযুক্ত নয়। তাই, হাইওয়ে পুলিশের ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেপরোয়া যান চলাচল প্রতিরোধে যানবাহনগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।’ (ইউএনবি)