Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে শান্তির বাণী প্রচারে সিকি কোটি মুসলিমের ৪ হাজার ৮শ’ মসজিদ
Prince-Group

চাঁদপুরে শান্তির বাণী প্রচারে সিকি কোটি মুসলিমের ৪ হাজার ৮শ’ মসজিদ

চাঁদপুরে ৮ উপজেলা ৭ টি পৌরসভা,৮৯ টি ইউনিয়নে ও ১ হাজার ৩ শ ৬৫টি গ্রামে সিকি কোটি মুসলিমের জন্যে ৪ হাজার ৮শ’ ৪২ টি মসজিদ দ্বীনের আলো ছড়াচ্ছে। শিশু গণশিক্ষার পাশাপাশি সপ্তাহের জুমার আলোচনায় মুসল্লিদের মাঝে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

সারাবছর ৫ ওয়াক্ত আজান ও নামাজ আদায় হলেও পবিত্র মাহে রমজানে জেলা, উপজেলা সদরে ও গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার এসব মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের আগমনে কানায় কানায় পূর্ণ হতে দেখা যায়। বিশেষ করে জু’মার দিনে মসজিদগুলো কানায় পূর্ণ থাকে। অনেক সময় মসজিদ আঙিনা ও রাস্তায়ও মুসল্লিরা নামাজ পড়তে হয়।

প্রতিটি মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে গড়ে ২শ থেকে ৩ শ’মুসল্লী নামাজ আদায় করে থাকেন। প্রচ- তাপদাহে নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে গ্রাম ও শহরের কিছু মসজিদের রয়েছে শীতাতপ (এসি) নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা।

প্রতিটি মসজিদে ওয়াক্ত নামাজসহ তারাবির নামাজ আদায়কারীদের উপস্থিতিও অন্যান্য মাসের তুলনায় ভালো। প্রতিটি মসজিদে রয়েছে একজন খতিব বা পেশ ইমাম ও একজন ও একাধিক মুয়াজ্জিন। এদের বেশিরভাগ ইমাম বা খতিবগণ ইফা কর্তৃক ইমাম প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ।

বুধবার (৮ মে) চাঁদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাথে আলাপকালে এ তথ্য জেনেছে চাঁদপুর টাইমস।

ইফার পরিসংখ্যান মতে, চাঁদপুর সদরে ৬ শ’৬৭টি, মতলব দক্ষিণে ৪ শ’ ৫৫টি মতলব উত্তরে ৫শ’ ৭৬টি, হাজীগঞ্জে ৬ শ’২৬টি,ফরিদগঞ্জে ৯ শ’৬০টি, কচুয়ায় ৮ শ’৭১টি,শাহরাস্তিতে ৪ শ’৩৩ টি এবং হাইমচরে ২শ ৫৪ টি মসজিদ রয়েছে। এসব অধিকাংশগুলোই জুম’আ মসজিদ।

জেলার ২ শ ৯৩ টি মাধ্যমিক স্কুল, ২শ’ ৬০টি মাদ্রাসা ও ৪৭ টি কলেজে (দু’একটি ব্যতীত) রয়েছে সংযুক্ত মসজিদ বা প্রয়োজনীয় নামাজ আদায়ের চমৎকার ব্যবস্থা। পাশাপাশি রয়েছে এতিমখানা।

MOSqUE

ঐতিহাসিক বড় মসজিদ

চাঁদপুরের বিখ্যাত ও জনবহুল মসজিদ গুলোর মধ্যে রয়েছে-হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ, চাঁদপুর পৌরসভায় বাইতুল আমিন মসজিদ, বেগম মসজিদ, চিশতিয়া মসজিদ,পুরাণ বাজার জামে মসজিদ, চেয়ারম্যান ঘাট বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, কালেক্ট্রয়েট জামে মসজিদ, বাস স্ট্যান্ড গোরে-এ গরীবা জামে মসজিদ,বাবুরহাট জামে মসজিদ, আবদুল করীম পাটওয়ারী জামে মসজিদ, বড়স্টেশন জামে মসজিদ, দাসাদী জামে মসজিদ ও কল্যান্দী জামে মসজিদ প্রভৃতি।

এ ছাড়াও প্রতি উপজেলা সদরে ও বিভিন্ন হাট বাজারে অনেক নামী-দামী নতুন মসজিদ রয়েছে। এরইমধ্যে চাঁদপুর সদরের তরপরচন্ডী এলাকায় প্রিন্স গ্রুপ ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি মসজিদের মতই আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে। এসব মসজিদগুলোর অবয়ব বা ভৌতিক অবকাঠামো দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে।

নব্বইয়ের দশক থেকে কয়েক বছর অনেক মসজিদে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও এখন আর সেটি নেই।

Kachua mosque

চাঁদপুরের কচুয়ায় প্রাচীনতম এক গম্বুজ বিশিষ্ট শাহী মসজিদ ও নেয়ামত শাহ (রহ.) এর মাজার

বিশেষ করে স্থানীয় ধনাঢ্য মহতি ব্যাক্তিদের সার্বিক সহায়তায় ও প্রবাসীদের আর্থিক অনুদানে এসব মসজিদগুলোর শীততপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, বাহারি রঙের টাইলস সংযোজন, ওজু খানা ও শৌচাগারের অবয়ব পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে।

জেলার ১ হাজার ২শ’৩৬ টি মসজিদে রয়েছে শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। গ্রামের বেশিরভাগ মসজিদগুলোতে প্রাচীন মুসলিম ঐতিহ্যের মক্তব ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মসজিদের ইমামগণ সেখানে দ্বীনি শিক্ষাসহ শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। প্রতি শুক্রবার জু’মা নামাজের খুৎবায় ইফা কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়ের ওপর দেশের সম-সাময়িক ও বিভিন্ন বালা-মছিবত সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুহূর্তে দেশ ও জাতির উন্নয়নে দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করে থাকেন ইমামগণ।

প্রতিবছর অধিকাংশ মসজিদ প্রাঙ্গণ ও ঈদগাহ মাঠে বার্ষিক ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করে থাকে মসজিদ কমিটির সদস্যগণ। শবেরাত, শবেকদর, ঈদে মিলাদুন্নবী, ওফাত দিবস, জমাতুলবিদা ইত্যাদি বিভিন্ন ইসলামী দিবসে ইমাম বা খতিবগণ প্রাণবন্ত আলোচনা উপস্থাপন করেন ।

চাঁদপুর ইফার উপ-পরিচালক মো.খলিলুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের মাধ্যমে এ শিশু ও গণশিক্ষালয়ে শিশুরা নৈতিক শিক্ষা পাচ্ছে ও শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শিশু ঝরে পড়া রোধ হচ্ছে, পড়াশুনায় আগ্রহ বাড়াচ্ছে ও শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষার সুযোগ লাভ করছে।’

প্রসঙ্গত, সারাদেশে বর্তমানে ৭৩,৭৬৮ টি মসজিদে শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব রহমান বলেন , ‘দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের অধীন মতলবের ছেঙ্গারচর উপজেলায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্মিত হচ্ছে মডেল মসজিদ।’

প্রতিবেদক- আবদুল গনি
১০ মে ২০১৯