চাঁদপুর সদরের মৈশাদী ইউনিয়নের একটি গ্রাম হামানকর্দ্দি। একসময় এ গ্রামের নারীরা পরিবার পরিকল্পনা কি, তা যানত না। না জানার কারণে প্রতি বছরই এ গ্রামে জন্মের হার বাড়ার পাশাপাশি মৃত্যুর হারও বাড়তো।
বর্তমানে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের বিচরণ ও তাদের পরামর্শে গ্রামটি এখন পরিবার পরিকল্পনা অর্থাৎ নারীদের সেবা কেন্দ্রে পরিচিতি লাভ করেছে। ১৩ হাজার ৯৯০ জন জনসংখ্যার মধ্যে এ গ্রামে ৬ হাজার ৯৪০ জন নারী।
গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবার পরিকল্পনার সেবা প্রধানকারী তাসলিমা আক্তার বলেন, হামানকর্দ্দি গ্রামে বর্তমানে অধিকাংশ নারীই পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানে। তারা এখন সচেতন। এখানে এক হাজার ২০২ জন সক্ষম দম্পতি। এদের মধ্যে এক হাজার দুজন পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে ১০২ জন দীর্ঘমেয়াদি ও ৮৪ জন স্থায়ী পদ্ধতি নিয়েছে।
হামানকর্দ্দি গ্রামের অধিকাংশ রোগীই ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নের। এ কেন্দ্রের ভিজিটর মানছুরা আক্তার জানান, ভালোসেবা পেয়ে কয়েকটি গ্রামের রোগীরা এখানে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। বর্তমানে এ কেন্দ্রে চারজন ডাক্তারের স্থলে আমাকে একাই সেবা দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে ওষুধ স্বল্পতা রয়েছে। তারপরও এখানে বিনামূল্যে প্রতি মাসে ১৫-২০ জন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করানো হয়।
গ্রাম ঘুরে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের কর্মীদের মাধ্যমে একাধিক সেবা গ্রহণকারী নারীরা কোনো অভিযোগ অনিয়মের কথা জানাননি। তারা সঠিক সেবা পেয়ে সুখের সংসার করছেন।
সেবাগ্রহণকারী ওই গ্রামের শামীমা আক্তার জানান, আমার দুটি সন্তান। ১০ বছরের কপাটি পদ্ধতি গ্রহণ করেছি। এতে কোনো টাকা দিতে হয়নি বরং তারা আমাকে টাকা দিয়েছে। আমি এখন সুখে আছি।
একই গ্রামের আয়শা বেগম জানান, আমার গর্ভাবস্থায় পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সেবা প্রদানকারীরা প্রায় প্রতিদিনই খোঁজখবর নিয়েছেন। তাদের পরামর্শ শোনায় আমার নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। সিজার করতে হয়নি। আমার এক ছেলে। আমি স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করে এখন ভালো আছি।
ওই গ্রামের নারী ইউপি সদস্য শিল্পী আক্তার বলেন, আমার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও দিনমজুর। এলাকার লোকজন একসময় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির কথা বললে রেগে যেত। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। গ্রামের প্রায় সব নারীই কোনো না কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আমার জানা নেই।
ওই গ্রামের ইউপি সদস্য জানান, গ্রামের নারীরা এখন বেশ সচেতন। এখানে অধিকাংশ নারীই পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সেবা প্রদানকারীদের অবাধ বিচরণ ও পরামর্শে। এখন এ গ্রামটি পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রাম নামে সবাই চেনে।
এলাকার একজন সহকারী শিক্ষক জানান, এ এলাকায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম খুবই ভালো । মাঠকর্মীদের পরামর্শ ও কেন্দ্রের ভিজিটরের আন্তরিকতায় নারীরা যেন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গর্ভবতী মায়েদের ও নারীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৬ জন সক্ষম দম্পতি রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনার সহকারীদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় জেলায় ৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৮ জন নারী পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৬ জন নারী অস্থায়ী, ৩২ হাজর ৬২৮ জন নারী দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি ও ৪২ হাজার ৬৫৪ জন নারী স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এছাড়া ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ হাজার ৯৪৫ জন গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসব হয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা চাঁদপুরের উপ-পরিচালক ডা. মো. ইলিয়াস জানান, জেলায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সন্তোষজনক। ৩৯০ জন পরিবার কল্যাণ সহকারীসহ সাড়ে ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় ৭৭ ভাগ কার্যক্রমে সফল হয়েছি।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। নারীরা পরিবার পরিকল্পনার স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করলে প্রতিজনকে ২ হাজার ৩০০ টাকা করে সম্মানি দেয়া হয়। এ যাবৎ আমরা ৩৭ হাজার ৩৪ জন স্থায়ী পদ্ধতি নারীকে ৮ কোটি টাকারও বেশি দিয়েছি।
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চরাঞ্চলের নারীদের পদ্ধতি গ্রহণের ওপর কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মীদের নারীদের সেবা প্রদানে কোনো অনীহার অভিযোগ এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আমার জানা মতে, সবাই আন্তরিক যার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগে আমরা ভালো অবস্থানে আছি।
নারীরা স্বাস্থ্যসেবা ও বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে পরিবার পরিকলপনার কার্যক্রমে জন্মনিয়ন্ত্রণে দেশকে আরও এগিয়ে নেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বার্তা কক্ষ
২ এপ্রিল,২০১৯