আড়াই, শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে শুক্রবার রাতে আগুন লাগার গুজবে প্রচন্ড ভয়ে আতংকিত হয়ে ভর্তিকৃত দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত ও অসুস্থ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বহু রোগী ও রোগীর স্বজনরা হারিয়েছেন নগদ টাকা পয়সা এবং নিজেদের ব্যবহৃত মোবাইল সেট।
যে দু,জন রোগী চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তারা হলেন, চাঁদপুর পুরান বাজার মেরকাটিজ রোডের সাধম আলীর পুত্র মোঃ হযরত আলী (৭০) ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা গ্রামের গফুর গাজীর ছেলে আব্দুল ছোবহান (৬৫)।
এদের মধ্যে হযরত আলী গত ১ অক্টোবরে পায়ে ফোঁড়া ও ফুসফুসে ক্যান্সার জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত ভোর রাত ৪ টা ২৬ মিনিটে তিনি মারা যান। আর আব্দুল ছোবহান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৪ অক্টোবর শুক্রবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনিও একই দিন ভোর পোনে ৫ টায় মারা যান বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
অনেকেই বলছেন হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের কথা শুনে ভয়ে আতংকিত হয়ে তারা মারা গেছেন। এছাড়া ও হাসপাতালে ভর্তিকৃত অপারেশন করা বহু রোগী দৌড় দিতে ক্ষত স্থানে ব্যথা পেয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোন, কোন রোগীর ইনজেকশন ফুশ করার জন্য যে ক্যানোলা লাগানো হয়েছে, তা পড়ে গিয়ে অনেকের রক্ত বের হয়েছে।
খবর নিয়ে জানাযায় গত ৪ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১০ টায় হাসপাতালের ৪র্থ তলায় হঠাৎ রোগীরা আগুন লাগছে বলে চিৎকার এবং দৌড়া দৌড়ি করে নিচে নামতে শুরু করেন। তাদের চিৎকার শুনে আগুন লাগার আতংকে হাসপাতালের ৩য় তলার শিশু ওয়ার্ড এবং পুরুষ ওয়ার্ডের প্রত্যেক বেডের রোগী এবং রোগীর লোকজনদেরকে আগুন লাগছে আগুন লাগছে বলে চিৎকার করে হাসপাতালের নিচে নেমে যায়।
এ সময় হাসপাতাল এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।আর প্রত্যেকটি রোগী এবং রোগীর সাথে থাকা লোকজন আগুন আতংকে ভয়ে দৌড়ে অস্থির হয়ে পড়েন। এসময় রোগী এবং রোগীর স্বজন ও কয়েকজন দায়িত্বরত নার্সসহ প্রায় ৩০ জনের মত আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের চতুর্থ তলায় অগ্নিকান্ডের কোন ঘটনাই ঘটেনি।
হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্সরা জানায় ৪র্থ তলায় ভর্তিকৃত একজন রোগীকে দেওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডার কারো শরীরের ধাক্কা লেগে মেঝেতে পড়ে গিয়ে অক্সিজেনের মিটারটি ভেঙ্গে যায়। অক্সিজেন সিলিন্ডারটি মাটিতে পড়ার শব্দে সবাই আগুন লাগছে ভেবে চিৎকার করতে, করতে নিচে নেমে পড়ে।
আগুন লাগার এই আতঙ্ক কয়েক সেকেন্টের মধ্যে হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে সবকটি বিভাগে রোগীরা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়া দৌড়ি শুরু করেন। অধিকাংশ রোগীরাই তাদের বেডে টাকা এবং মোবাইল সেট রেখে আগুনের ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে নিচে নেমে পড়েন। কেউ কেউ আগুিকান্ডের কথা শুনে বেডের পাশেই ঘুরে পড়ে যায়। আর এ সুযোগে চোর চক্ররা রোগী ও স্বজনদের ফেলে রাখা নগদ টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে যায়।
হাসপাতালে ভর্তিকৃত একাধিক রোগী জানান, আগুন আতংক শেষে তারা অনেকেই তাদের নগদ টাকা ও মোবাইল সেট খুঁজে পাননি।
বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেউ কথা বলতে চাননি।
প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯