ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ‘ক্যানটিন বয়’ চাঁদপুরের নজরুল ইসলামের কখনো লক্ষ্য ছিলো না ক্যান্টিনে চাকরি করা। তাঁর লক্ষ্য তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন নজরুল।
এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই তিনি চলে আসেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে। হলের ক্যানটিন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা চাঁদপুরের শাহাবুদ্দিন নজরুলের গ্রামের বাসিন্দা। সেই সুবাদেই তাঁর হলের ক্যানটিনে ‘ক্যানটিন বয়’ হিসেবে চাকরি পেতে বেগ পেতে হয়নি। বেতন—মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ক্যানটিনের কাজের ফাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সংগ্রাম শুরু করেন তিনি।
নজরুল ইসলামের জন্ম ২০০২ সালে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার দহুলিয়া গ্রামে। জন্ম থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে নজরুলের লড়াই চলছে। আবদুল ওহাব ও রাবেয়া বেগমের চার সন্তানের মধ্যে নজরুল তৃতীয়। নজরুল কচুয়ার পালাখান আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ ৪.৬ পেয়ে দাখিল পাস করেন।
তারপর অর্থের অভাবে নজরুলের পড়ালেখা থেমে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়। কিন্তু দমে যাননি তিনি। বড় ভাইয়ের চেষ্টা ও অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যান নজরুল। এ বছর পালাখান রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। অসুস্থতার কারণে বাবা আর কাজ করতে পারেন না। সংসারের হাল ধরেছেন বড় ভাই। নজরুল ও ছোট বোনের পড়াশোনার ব্যয়ও তিনি বহন করছেন।
আজ বৃহস্পতিবার জিয়াউর রহমান হলের এক কক্ষে বসে তাঁর সঙ্গে কথা হলো। নজরুল ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। জানালেন, গত দেড় মাস প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত হলের ক্যানটিনে কাজ করেছেন তিনি। মাঝখানের বিরতিতে ভর্তি পরীক্ষার পড়া পড়েছেন। ক্যানটিন বন্ধ হওয়া পর রাতে মসজিদ ও পত্রিকা পড়ার কক্ষে পড়াশোনা করেছেন নজরুল।
গত ১৭ জুলাই এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের পর হলের সবাই জানলেন, তাঁদের ‘ক্যানটিন বয়’ নজরুল পরীক্ষায় ভালো ফল করেছেন। ওই দিনই নজরুলের ভর্তি পরীক্ষার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন হলের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুদ।
নজরুল বললেন, ‘এখন পড়াশোনা করার সময় বেশি পাচ্ছি। এভাবে যদি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাব।’ আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানালেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে নজরুল ক্যানটিনে কাজ করার ফাঁকে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না। তাই ওর দায়িত্ব নিয়েছি।’ নজরুল কোনো কোচিং করেন না। তবে হলের দুই শিক্ষার্থী আবির ও কায়সার বিনা পারিশ্রমিকে তাঁকে ইংরেজি ও বাংলা পড়াচ্ছেন। আর এক সেট বই দিয়েছে একটি সংগঠন।
এইচএসসি পরীক্ষার পর আর বাড়িতে ফেরা হয়নি। ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই বাড়ি ফিরবেন নজরুল। ঢাবিতে ভর্তি হতে পারলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চান তিনি। বললেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন করা সম্ভব। আমি দরিদ্র মানুষের কাজে আসতে চাই। আমি নিজে দরিদ্র তাই দরিদ্র মানুষের কষ্ট আমি বুঝি।’ (তথ্যঋণ-prtothomalo)
বার্তা কক্ষ, ২ আগস্ট ২০১৯