বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মটের ১ম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
২৮ অক্টোবর রোববার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়ে এই ধর্মঘট। যানবহান সংকটের মধ্যে চাঁদপুরসহ দেশের কয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে।
পরিবহনের জন্যে অপেক্ষায় থাকায় অনেককেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজে পায়ে হেটে পথ চলতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার বৃষ্টিতে ভিজে বাহন হিসেবে খোলা ৩ চাকার ভ্যানকেই ব্যবহার করতে হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে বৃষ্টির রেশ কাটতেই লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নিলেও ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে কমেছে তাপমাত্রা। বৃষ্টির সাথে যোগ্য হয়েছে হালকা শৈত্যপ্রবহা।
এতে যাত্রীসাধারণদের পরিবহন সংকটের মধ্যে নতুন করে ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে। পঞ্জিকার হিসেবে পৌষ আসতে দেড় মাস বাকি থাকলেও হেমন্তের আবহাওয়ায় মিলছে হিম হিম বাতাস।
রোববার আবাহাওয়া অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাস কর্মকর্তা জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর প্রভাবে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। আরও দু’তিন দিন এমন অবস্থা থাকবে। বুধবারের পরে বৃষ্টির প্রবণতা কমবে ও রোদেলা আবহাওয়া বিরাজ করবে। তাপমাত্রাও স্বাভাবিকভাবে বাড়বে।”
আবহাওয়া বিভাগরে মতে রোববার চাঁদপুর ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি শীতালু ভাব বাড়বে। এখন উত্তুরে হাওয়া না বইলেও মধ্য কার্তিকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি ঠা-ার অনুভূতি বাড়িয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, নভেম্বর মাসে রাতের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। সে সময় বঙ্গোপসাগরে দুই-একটি নিম্নচাপ হতে পারে; যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এদিকে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের প্রথম দিনে চাঁদপুর পৌর বাস টার্মিনাল থেকে কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। এসময় রাস্তায় বিভিন্ন সড়কে কিছু যানবাহন চলাচলের চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। ফলে ধর্মঘটের কারণে জেলার ছোট-বড় সকল সড়কে রিক্সাবাদে অন্যসব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সিমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারন মানুষ। আর দাবী আদায় না হলে ৩০ অক্টোবর থেকে লাগাতার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর-পুরাণবাজার ও হাইমচর বেড়িবাঁধ সড়কের বহরিয়া বাজারে সিএনজি স্কুটার অটোবাইক চালকরা রাস্তায় বিক্ষোভ এবং পিকেটিং করছে।
চাঁদপুর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার মুন্সি জানান, তারা সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনগণের জন্য অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া এ দাবি তারা কোন ভাবে মেনে নিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তারা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। সরকার তাদের দাবী মেনে নিলে কর্মবিরতী প্রত্যাহার করবেন।
এদিকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় হাজারো যাত্রীকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য সড়কের পাশে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মুখে পরে চাকুরীজীবী ও স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসাসেবা নিতে শহরে আসা রোগীরা।
এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নৌ-টার্মিনাল থেকে আসা লঞ্চ যাত্রীদের দূর্ভোগের যেনো সীমা ছিলো না। যানবাহন না পেয়ে এসকল লঞ্চ যাত্রীদের ভ্যানগাড়িতে চরে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে রাস্তায় গাড়ি না থাকায় যাত্রীরা যেনো অসহায় হয়ে পরে। এতে করে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
২৮ অক্টোবর, ২০১৮
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur