২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট ঘোষণা করেন। অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট ঘোষণার সময় বাজেটের একটি অংশে লেখা ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ’ অংশ পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় তিনি নিজেই হেসে ফেলেন। হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আমার না। আমি অর্থমন্ত্রীর বাজেট পড়ছি।’ -এ নিয়ে সংসদে হাসির রোল পড়ে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার কিছু সময় পর বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে তিনি অসুস্থতাবোধ করেন। পরে তার পক্ষে বাজেটের বাকি অংশ প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করেন। এ বিকাল সাড়ে ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট ঘোষণা পাঠ করছিলেন।
এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অসুস্থ অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করছেন।
এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অসুস্থ থাকার কারণে আসতে দেরি হওয়ায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ছাড়াই মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হয়। পরে অর্থমন্ত্রী অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে সরাসরি বৈঠকে যোগ দেন।
প্রথানুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চিরচেনা কালো ব্যাগ নিয়ে সংসদে আসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর পরেই সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামের বাজেট বই থেকে বক্তৃতা শুরু করার আগে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপনের জন্য স্পিকারের অনুমতি চান অর্থমন্ত্রী। স্পিকার অনুমতি দিলে প্রামাণ্যচিত্রটি উপস্থাপন করা হয়।
শুরুতেই মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থসামাজিক বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হয়।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে ২০৪১ সালকে টার্গেট করে। তবে এ বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে নানা প্রতিকূলতার।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রবৃদ্ধিতে অসমতা, বিনিয়োগ সংকট, সুশাসনের ঘাটতি, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, অর্থনীতির আকারে রাজস্ব আদায় কম, বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি।
তবে এসব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধিকে আগামী তিন বছরে ৮ দশমিক ৬ শতাংশের ঘরে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিশাল ব্যয়কে মেলাতে গিয়ে উচ্চ রাজস্ব আদায়ের হিসাবও করেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, তিনি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চান ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধিকে টেনে নিতে চান ৮ দশমিক ৬ শতাংশে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ নতুন বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে আগামী ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।