চাঁদপুর

বিপিএলের জন্যে নিজেকে তৈরি করছেন চাঁদপুরের মেহেদী হাসান

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা চলাকালীন সময়ে ইয়ান বিশপ বলেছিলেন, ছেলেটা বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ। এরপরে বাংলাদেশ সফরে এসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন, ‘কোথায় সেই রানা? সে তো এখন বাংলাদেশ দলের আশেপাশে থাকার কথা।’ ইনজুরির কারণে মেহেদী হাসান রানার সময় তো একটু লেগেছে। কিন্তু তিনি নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছিলেন বিপিএলের গত আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে। সব ম্যাচ খেলতে না পারলেও যে ক’টি ম্যাচ খেলেছেন, নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এনসিএল মাতিয়েছেন চিটাগাং ডিভিশনের হয়ে। এর সফলতার ফল হিসেবে উইন্ডিজদের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে, সফলতাও পেয়েছেন।

প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন চাঁদপুরের মেহেদী হাসান রানা।

বিপিএলের এবারের আসরে রানাকে দলে ভিড়িয়েছে সিলেট সিক্সার্সে। মেহেদী হাসান রানার বিপিএল ভাবনা জানতে তার সাথে কথা বলেছিল টাইগার্স কেইভ। পাঠকদের জন্যে তা তোলে ধরা হলো :

অনূর্ধ্ব-১৯ শেষে সবাই আশা করেছিল, খুব দ্রুতই জাতীয় দলের আশেপাশে দেখা যাবে আপনাকে। ইয়ান বিশপও আপনাকে নিয়ে টুইট করেছিলেন। কিন্তু এরপরে ইনজুরির কারণে হুট করেই হারিয়ে যান আপনি। এখন কি পুরোপুরি ফিট আছেন?

রানা : আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন অনেক ভালো আছি। বিগত এক বছর আমি সব ধরনের টুর্নামেন্টেই খেলছি। এখন আলহামদুলিল্ল্লাহ অনেক ফিট আছি।

উইন্ডিজদের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেছিলেন, উইকেটও পেয়েছেন। অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

রানা : আসলে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে আমার অভিজ্ঞতাটা ভালোই হয়েছে। এখানে অধিকাংশ খেলোয়াড়ই আমার চেনা ছিল। যেমন স্যামুওয়েলস, ব্রাভোদের সাথে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে খেলেছি। আবার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে হেটমায়ার, পল ওদের সাথে প্রতিনিয়তই খেলেছি, সে কারণে আমার অভিজ্ঞতাটা ভালোই ছিল কিভাবে ওদের বিপক্ষে বোলিং করতে হবে। সে জন্যেই আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভালো করতে পেরেছি।

মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে ড্রেসিংরুমে শেয়ার করার একটা ইচ্ছে বাংলাদেশী মোটামুটি প্রায় ক্রিকেটারেরই থাকে। প্রস্তুতি ম্যাচের মাধ্যমে আপনার সে সুযোগটা এসেছিল। উনার অধীনে খেলেছেনও। অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

রানা : মাশরাফি ভাই, আসলে কী বলবো, আসলেই উনি সবদিক থেকেই একজন হিরের টুকরো। এটা সব দিকেই- ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বলেন কিংবা ক্রিকেটের বাইরের লাইফস্টাইলের কথা বলেন, সব দিকেই উনি পারফেক্ট। আমি অনেক গর্ব করি যে, আমি উনার অধীনে একটি ম্যাচ খেলতে পেরেছি। আমি আল্লাহর কাছে এটা চাইবো যে, আমি যেন ন্যাশনাল টিমেও একটা ম্যাচ উনার অধীনে খেলতে পারি। তারপরও বিসিবি একাদশে খেলার কারণে উনাকে আমি অনেকটা সামনে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আসলেই আমরা মাঠে যখন খেলতে নামি, কোনো ভাইয়া কোনো প্রেশার তৈরি করতে দেয় না। তাছাড়া একটা বল যখন বাউন্ডারি হয়, তখন এসে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয় যে, ‘এই বলটা করিস না, ব্যাটসম্যান এই বলটা খুব ভালো খেলে’। আসলে এইগুলা অনেক ইন্সপায়ারিং একটা বোলারের জন্যে।

দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএল খেলতে যাচ্ছেন। প্রস্তুতি কেমন?

রানা : হ্যাঁ, বিপিএলের প্রস্তুতিটা ভালোই নিচ্ছি, মিরপুরে নিয়মিত অনুশীলন করছি, যেসব জায়গায় আমার কমতি ছিল বা আছে ওইগুলা নিয়ে একটু বেশি কাজ করছি। আর আমি আশাবাদী যে বিপিএলের আগেই পুরো শতভাগ সফল হব, ইনশাআল্লাহ।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে সব ম্যাচ খেলতে না পারলেও যেগুলো খেলেছেন, আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। এবারের বিপিএলে সিলেটের হয়ে খেলছেন। এই বিপিএল নিয়ে কোনো আলাদা প্ল্যান আছে কি?

রানা : আসলে কি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে গতবছর বিপিএল যখন খেলেছিলাম, তখন আমাদের লোকাল খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ পাওয়াটা কঠিন ছিল। কারণ, প্রত্যেক দলে পাঁচজন বিদেশী খেলোয়াড় খেলতো। এইবছর যেহেতু একজন কমিয়ে দেয়া হলো তো আমাদের লোকাল খেলোয়াড়দের জন্যে সুবিধা হয়েছে। সুতরাং, যদি আমার সুযোগ আসে আমি চাইবো যে আমার শতভাগটা দেয়ার, আমার টার্গেট থাকবে ভালো কিছু করার এবং আমাকে আবার পুনরায় আমার আগের জায়গায় ফিরে নেয়ার চেষ্টা করবো।

সিলেট সিঙ্ার্সের হয়ে ডেভিড ওয়ার্নার, ফ্লেচার, সোহেল তানভীরদের সাথে ড্রেসিংরুমে শেয়ার করবেন। আপনার কি মনে হয় এটা আপনার জন্যে অনেক বেশি প্রাপ্তির হবে?

রানা : হ্যাঁ, সেটাতো অবশ্যই, যেখানে ডেভিড ওয়ার্নার, সোহেল তানভীর, ইমরান তাহিরের মতো খেলোয়াড়রা থাকবে। আসলে এখানে অনেক লিজেন্ড থাকবে। আমি মনে করি, ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা যাবে। আসলে সত্যি কথা বলতে গেলে, একটা প্লেয়ার আরেকটা প্লেয়ার থেকে অনেক কিছু শিখতে বা বুঝতে পারে যে কী করলে কী হবে, তো আমি অবশ্যই সেটা চেষ্টা করব। যদি সুযোগ আসে তাহলে তো আমি খেলব, আর সুযোগ না আসলে আমি ওদের সাথে আলোচনা করব, আমার ল্যাকিংসগুলো নিয়ে ওদের সাথে আলোচনা করবো। তারপর ড্রেসিংরুমের ব্যাপারটা হচ্ছে যে, আমি মনে করি এটা একটা প্রাপ্তি আমার জন্য যে, বিশ্বের বড় বড় লিজেন্ডদের সাথে ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে পারবো।

চাঁদপুর শহর থেকে প্রায় ৫০ কি.মি. দূরে কচুয়ায় বাড়ি মেহেদীর। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মঞ্জুরুল হক। তাদের বাড়ি কচুয়া উপজেলার করইশ এলাকায় ৮নং ওয়ার্ডের মৃধা বাড়ি। শহর থেকে বেশ দূরে কচুয়া উপজেলা। বাসে আসতে প্রায় দেড়ঘন্টা লাগে চাঁদপুর শহরে। সেখান থেকেই সপ্তাহে ৩-৪ দিন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমিতে এসে অনুশীলন শুরু করেন কিশোর বয়সেই।

এরপর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, ভারতসহ অনেক স্থানেই খেলেছেন। ঢাকাতে শেখ জামাল ক্লাব ও লিজেন্ড অব রূপগঞ্জের মতো ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় দল ও বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময় কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রানা। তাছাড়া মিরাজ, ফিজ, সাইফুদ্দিনদের সাথে খেলেছেন অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে। গত কয়েক বছর দেশ-বিদেশে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাতাচ্ছেন এই তারকারা।

তাই তো সতীর্থরাই এখন অনুপ্রেরণার নাম মেহেদী হাসান রানার কাছে। চাঁদপুরে রয়েছেন তার প্রিয় কোচ শামিম ফারুকী।

বার্তা কক্ষ
০৯ জানুয়ারি,২০১৯

Share