চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে শ্রীকালিয়া মুন্সিবাড়ির ছেলে তমাল চাকরি করতেন ঢাকার ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডের সেলস ম্যানেজার হিসেবে। রাজধানীর সারুলিয়ার ডেমরায় থাকতেন পরিবার নিয়ে।
প্রতিদিনের মতো কাজের তাগিদে এফআর টাওয়ারে গতকাল বৃহস্পতিবার অবস্থান করছিলেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ আগুন লেগে যায় টাওয়ারটিতে। অনেকে বেঁচে গেলেও সেখানে প্রাণ হারান তমাল।
অসময়ে তার এ চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছেন না। শুধু তমালের পরিবার নয়, গ্রামের বাড়ির পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে পুরো গ্রামবাসী শোকে স্তব্ধ। তমালের বাবার নাম মোহাম্মদ মকবুল আহমেদ, মায়ের নাম জান্নাতুল ফেরদৌস।
আরও পড়ুন: বনানীতে আগুনে ফরিদগঞ্জের ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু
মৃত্যুর পর উদ্ধার হওয়া আইডি কার্ডের তথ্য অনুযায়ী, তমাল ১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে তিনি ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১০-১১ সেশনে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করেন।
স্ত্রী আর এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল তমালের দিনগুলো। মেয়েটি প্রথম শ্রেণিতে পড়ে, ছেলেটির বয়স মাত্র দুই বছর। প্রাণপ্রিয় দুই সন্তানকে রেখে তমাল এখন ভিন্ন এক জগতের বাসিন্দা। যেখান থেকে আর কখনও ফিরে আসা সম্ভব নয়।
তমালের আকস্মিক মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। স্বজনরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার এ অকাল মৃত্যু। সম্পর্কে তমালের চাচি ঔহিদা বেগম বলেন, ‘তমাল আমার ভাসুরের ছেলে। আজ তার আসার কথা ছিল। সে আসতে পারে নাই। দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। আমি এক সন্তানহারা মা। আমি জানি, সন্তান হারানোর বেদনা কতটা কঠিন।’
তমালের বড় জেঠা বদি আহমেদ মুন্সি। তিনিও শোকে স্তব্ধ। বলেন, ‘ছেলেটা আইজ-ই বাইত আওয়ইনা আছিল। অনুষ্ঠান আছিল বাড়িত। কিন্তু দুর্ঘটনায় হেয় আসে নাই। আর কোনোদিন আইব না’- বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।
ইমরান হোসেন, তমালের আপন চাচাতো ভাই। বলেন, ‘তমাল আমাদের চাচাতো ভাই লাগে। তার জন্মটা এখানে হলেও ঢাকাতে সে পরিবার নিয়ে বসবাস করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে। আগুনে পুড়ে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য আমরা খুবই মর্মাহত। তার আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করি। তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। এলাকাবাসীও তার এ মৃত্যুতে শোকাহত।’
তার আরেক জেঠি হোসনে আরা বলেন, ‘তমাল ছিল খুবই নম্র ও ভদ্র স্বভাবের। শান্ত-নীরব ছেলেটি এভাবে চলে যাবে, কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’
প্রতিবেশী আবু ইউসুফ জানান, সচরাচর না দেখলেও তমাল সম্পর্কে ছিল তার বেশ ভালো ধারণা। সে ছিল খুবই নম্র ও ভদ্র একটি ছেলে।
চাচা মনির হোসেন বলেন, ‘তমালের মৃত্যুতে আমরা বেশ শোকাহত। তার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কখনোই কাম্য ছিল না। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুক। এটাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।’
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় তমালের বেড়ে ওঠা। ছুটিতে হয়ত আসা হতো বাড়িতে। কর্মজীবনে প্রবেশের পর ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতে তেমন আসা হতো না। ঢাকায় তাদের নিজের বাড়িও আছে। কিন্তু তবুও মা-মাটির টান যে সবচেয়ে বড়, সে কারণে সময় পেলে ছুটে আসতো বাড়িতে।
বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কে ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারের অবস্থান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে একটার দিকে এ ভবনে আগুন লাগে। এতে ২৫ জন নিহত ও ৭৩ আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানায়। এফ আর টাওয়ার ২৩তলা।
করেসপন্ডেট
২৯ মার্চ,২০১৯