জাতীয়

বনানীতে আগুনে নিহত ২৫: ডিএমপি

রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতের সংখ্যা নিয়ে ‘বিভ্রান্তির’ মাঝে শুক্রবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধার অভিযানে ২৫ জনের লাশ পাওয়া গেছে।

ডিএমপির গুলশান জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ শুক্রবার(২৯ মার্চ) সকালে এফআর টাওয়ারের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সবার লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি একজনের লাশ ঢাকা মেডিকেলে আছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়াও সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা মেডিকেলে আসা ২৪টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। একটি লাশ মর্গে আছে। শ্রীলংকার নাগরিক নিরশ ডিকে রাজের লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। তার লাশ মর্গে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর ১৭ নম্বর রোডে ২২ তলা এফআর টাওয়ারের নবম তলায় আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট কাজ করে। এদের সঙ্গে যোগ দেন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। এলাকার সাধারণ মানুষও উদ্ধারকাজে অংশ নেন। উদ্ধারকাজে অংশ নেয় ৫টি হেলিকপ্টার। বালি-পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালানো হয়। হেলিকপ্টারগুলো বাতাস দিয়ে ধোঁয়া সরানোর চেষ্টা করে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৬ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

সন্ধ্যায় একাংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে প্রবেশ করেন। সেখানে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে নিচে নামিয়ে আনেন।

এদের অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। ধোঁয়ার কারণে অজ্ঞান হয়েও মারা গেছেন কেউ কেউ। আবার জীবিতও অনেককে উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে বলেন, বনানী এফআর টাওয়ারের আগুনে ১৯ জন মারা গেছেন।

এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭ এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনজনের মৃতদেহ রয়েছে। তবে রাত ১১টার পর ফায়ার সার্ভিসের ঘোষণার পর মৃতের সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত বলা হয় ১৯ জন মারা গেছেন। কিন্তু হঠাৎ ১১টা ১০ মিনিটে ঘোষণা দেয়া হয় মৃতের সংখ্যা ২৫। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে তারা দ্রুত মৃতের সংখ্যা গণনা শেষে ফের ঘোষণা দেন মৃত ১৯।

২৫ না ১৯ আসলে মৃত কত। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা খুরশেদ আনোয়ার যুগান্তরকে বলেন, কুর্মিটোলায় মৃত ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেলের মৃতদেহের সঙ্গে যোগ দেয়া হয়েছে।

এটি দুবার হওয়ায় সংখ্যা ২৫-এ দাঁড়িয়েছে, যা সঠিক নয়। পরে সব হাসপাতালের তথ্য হালনাগাদ করে দেখেছি আসলে ১৯ জনই মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭৩ জন। নিখোঁজ রয়েছেন ২০ জন।

২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের ৩৬ দিনের মাথায় বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। চুড়িহাট্টায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৭১।

এর আগে পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১১৯ জনের মৃত্যু হয়। এবার বনানীর এফআর টাওয়ারে মৃত ১৯। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। (যুগান্তর)

যে কারণে ভয়াবহ রূপ নেয় এফ আর টাওয়ারের আগুন

রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারের আগুন ভয়াবহ রূপ নেয় ভিনাইল বোর্ড, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র থাকায়। বিভিন্ন অফিসে এসব দাহ্য পদার্থ থাকায় তা রাসায়নিকের মতোই দ্রুত জ্বলে ওঠে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমকে জানান, ‘২২ তলাবিশিষ্টি বহুতল ভবনটির ৮, ৯ ও ১০ তলার বিভিন্ন ভিনাইল বোর্ড, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বিশেষ করে কম্পিউটার থাকায় আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে।’

তিনি জানান, ভবনটির ৮, ৯ ও ১০ তলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন ঠিক কোন ফ্লোর থেকে লেগেছে তা- এখনো নিশ্চিত নয়। তবে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা তদন্ত করলেই জানা যাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটের দিকে ভবনটির ৯ তলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। পরে এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট ছাড়াও বিল্ডিংয়ের ওপর থেকে হেলিকপ্টার থেকে বালু ফেলে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হয়। এছাড়াও ৫টি হেলিকপ্টার ও সেনাবাহিনীসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা উদ্ধারকাজে অংশ নেয়।

বার্তা কক্ষ
২৯ মার্চ,২০১৯

Share