সোমবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম এ হান্নানের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে।
হামলা ও সংর্ঘষের ঘটনায় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা একে অন্যকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিচ্ছে। মূলত এই সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে তার একটি চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জ্ঞাত ১৫০ জন সহ ৪ থেকে ৫শ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে থানার অফিসার ইনচার্জ হারুন অর রশিদ চৌধুরী।
বিএনপির গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন আরিফ পাটওয়ারী (৪৩), ইমান হোসেন (১৮), ইয়াছিন শেখ (৩৫), সিরাজুল ইসলাম (৩৬), হারুনুর রশিদ (৫৯), কাজী ওসমান গণি (৩৫), মো. রানা (৪৩), নুরুউদ্দিন (১৯), মো. রাসেল (২৬), মো. শাহীন (২৬), জসিম উদ্দিন (২৪), হেলাল উদ্দিন (২২), বেলাল হোসেন (২৪), আবদুল হক (২৪), রুবেল গাজী (২৬), আশরাফ আলী (২৩), মহিবুল্ল্যাহ (২৩), আবু মুসা (২২), আ. কাদের (৫৫) প্রমুখ।
সংগঠিত ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, দলীয় প্রতীক পাওয়ার পর বিএনপির প্রার্থী এম এ হান্নানের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি মিছিল বের হয়।
মিছিলটি ফরিদগঞ্জ বাজারের সুফিয়া মার্কেট পার হওয়ার সময় পুলিশ পশ্চিম দিক থেকে এসে মিছিলের উদ্দেশ্যে হাত উঠায়। এসময় মিছিলের অগ্রভাগ হাজী আউয়াল সুইটস পার হয়ে পশ্চিম বাজারের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। পুলিশ মিছিলটিতে অতর্কিতে নেতা-কর্মীদের লাঠিচার্জ করে ও বেধড়ক পেটায়। মূহূর্তে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে কিছু সংখক নেতা-কর্মী সমর্থক মিলিত হয়ে ঘুরে দাঁড়ালে দু’ পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ বিএনপি নেতা-কর্মী আহত হয়। অপরদিকে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবী করে পুলিশ।
এদিকে সংর্ঘষের সময় সাবেক ছাত্রনেতা আরিফ পাটওয়ারীসহ দুই জনকে আটক করে পুলিশ এবং আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। এদিকে ঘটনার পর দলীয় নেতা-কর্মীসহ এম এ হান্নান অভিযোগ দায়ের করতে থানায় যান। কিন্তু পুলিশ কোন অভিযোগ আমলে নেয়নি বলে দাবী বিএনপি নেতাদের।
এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী ক’জন সাংবাদিক, বাজার ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ এ প্রতিবেদককে জানান, সোমবার বিকেলে কোন ধরনের উস্কানি ছাড়াই পুলিশ বিএনপির মিছিলে লাঠিচার্জ করেছে। এর আগে দুপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংবাদিক শফিকুর রহমানের একটি শো-ডাউন করে।
বিএনপির মিছিলের পূর্বে ইসলামী শাসনতন্ত্র মনোনিত প্রার্থী বাজারে আরেকটি শো-ডাউন বের করে। ওই দুটি শো-ডাউনের কোনটিতে পুলিশ বাধা কিংবা লাঠিচার্জ করেনি। বিএনপির মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জের এই ঘটনা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে পুলিশ সিইসির নির্দেশানা অমান্য করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে বলে দাবী করেন তারা।
এ ঘটনার এমএ হান্নান স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিনা উস্কানিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ওসি সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। অপরদিকে ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জ্ঞাত ১৫০ জন সহ ৪ থেকে ৫শ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে থানার অফিসার ইনচার্জ হারুন অর রশিদ চৌধুরী।
এদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এমএ হান্নান মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুরে আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে দাবী করেন, পুলিশ মিথ্যা গল্প-কাহিনী সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে। পুলিশ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নির্দেশ অমান্য করেছে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে পুলিশের বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি। বিনা উস্কানিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলা ও হয়রানি করা হচ্ছে। গায়েবী মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেফতার করছে পুলিশ। বাড়ি-ঘর তল্লাশী চালিয়ে মহিলাদেরকে গাল-মন্দ করা হচ্ছে।
নেতা-কর্মীদের আটকের বিষয়ে এমএ হান্নান বলেন, সোমবারের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২১ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ফরিদগঞ্জে বিএনপি’র প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি’র প্রতিপক্ষ এখন পুলিশ। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে গল্প কাহিনী সাজিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে। এই হামলার প্রতিবাদে আমরা চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. মাজেদুর রহমানকে লিখিত ভাবে অবহিত করেছি। আজকে (১১ ডিসেম্বর) পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে ইসির নিকট আবেদন জানাচ্ছি এই ওসির প্রত্যাহারের জন্যে। নয়তো বা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে জনগণকে সাথে নিয়ে এই পেটোয়া পুলিশ বাহিনীকে প্রতিহত করা হবে। এর দায়ভার আমরা নেবো না।
ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি হারুনুর রশিদ দাবী করেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলায় এস আই ওমর ফারুক, এস আই আবুল কালাম আজাদ, এএস আই রসুল ও সুমন্ত আহত হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রাতে একটি মামলা হয়েছে। এপর্যন্ত ১৯জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে গত সোমবারের সংর্ঘষ, পুলিশের মামলা ও গ্রেফতারের আতংকে সমগ্র উপজেলাতে জনসাধারণের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ ডিসেম্বর, ২০১৮