বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে নেই। শ্রম, মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তারা। এরই মধ্যে দুঃসাহসী ও চ্যালেঞ্জি কর্মকাণ্ডে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে তারা। এ ধারাবাহিকতা এখন শুধু শহরে নয় উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রামেও যুক্ত আছেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও মানব সেবায়। নানা রকম যুদ্ধ পাড়ি দিয়ে একমাত্র নিজের সাহসিকতায় অনেক নারীর সফলতার গল্প আমরা শুনেছি।
গ্রামের সবাই যাকে চিনেন নানী নামে। তিনি হলেন জহিরন বেওয়া। স্থায়ীয় এমপিও কারো কাছে অপরিচিত হলেও গ্রামের সবার কাছে নানী জহিরন বেওয়া এক পরিচিত নাম।
তিনি সকাল হলেই ক’টা ভাত মুখে তুলে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যান। তারপর আশেপাশের গ্রামের সবার খোঁজ খবর নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন। তিনি নাকি এসব বাদ দিতে পারেন না, তার অভ্যাস হয়ে গেছে। তিনি যদি কখনো নিজে অসুস্থ থাকেন তবে খোঁজখবর নিতে তার বাড়িতে লোকজনের ঢল নেমে পড়ে।
৯০ বছর বয়সী জহিরন বেওয়া থাকেন লালমনিরহাটের আদিতমারী গ্রামে। ৪৪ বছর ধরে সাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন। প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে অসুস্থ দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ায় তার মূল কাজ।
জহিরন বেওয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, দেশ স্বাধীনের আগে তার স্বামী মারা যান, এরপর টানা ১০ বছর নার্সের চাকরি করেন। চাকরি থেকে অব্যহতি নিয়ে তিনি একটা সাইকেল কিনেন। এরপর শুরু হয় নিজের গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া।
প্রত্যন্ত গ্রামে একজন বিধবা নারী আজ থেকে প্রায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর আগে সাইকেল যোগে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, তখন আশেপাশের মানুষের কেমন চাহনি ছিলো তার প্রতি। কতটা কটাক্ষ, তিরস্কার, টিপন্নী, টিটকারি সহ্য করে উনি নিজেকে এ কাজে সঁপে দিয়েছিলেন।
জহিরন বেওয়া বলেন, ‘আমি যখন সাইকেল চালানো শুরু করি, তখন মেয়ে-ছেলে সাইকেল চালাবে কি, গ্রামে তো সাইকেলই তেমন ছিলো না।’
স্থানীয়রা জানান, উনি এখন গ্রামের সবার জাতীয় নানী। সবাই তাকে নানী বলেই ডাকে, হয়তো ছেলে দেখলে তাকে নানী বলে ডাক দেয়, ছেলের বাবাও দেখলে নানী বলে ডাকে। অনেকে আবার আদর করে উনাকে নানী বুড়ি বলে ডাকেন। আমাদের এ অঞ্চলে সবাই নানী বুড়ি বললে জহিরন বেওয়াকে এক নামে চিনে, এমনকি আমাদের এমপিরে কেউ চিনুক না চিনুক কিন্তু এ নানী বুড়িকে আশেপাশের সব লোক এক নামে চিনে।
তারা জানান, নানীকে ভালোবেসে অনেকে পরামর্শ দেয়-নানী তোমার বয়স হইছে, এখন সাইকেল চালানো বাদ দাও, বাড়ি বাড়ি যাওয়া বাদ দাও, রাস্তা ঘাটে কখন কি ঘটে যায় কে জানে।
নানী এসব বাদ দিতে পারেন না, উনার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। সকাল হলেই উনি ক’টা ভাত মুখে তুলে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যান। তারপর, আশেপাশের গ্রামের সবার খোঁজ খবর নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন। নানী যদি কখনো নিজে অসুস্থ থাকেন, উনার খোঁজ খবর নিতে উনার নিজের বাড়িতে লোকজনের ঢল নামে।
আমরা হয়তো বইয়ে পড়েছি বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা- কিন্তু এমন অন্তরালে লুকিয়ে থাকা নানীদের অবদান তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কেউ তার কাজের ব্যপ্তি নিয়ে দীপ্তি ছড়িয়েছেন, কেউবা নানীর মত ছোট্ট পরিসরের আলোকিত সেবক।
বার্তা কক্ষ
১৬ জুন ২০১৯