কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে আগামী মাস খানেকের মধ্যে অর্থাৎ শীত মৌসুম আসার আগেই ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু করতে চাইছে বাংলাদেশের সরকার। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিবিসিকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য ভাসানচর এখন পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে।
“আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এই বর্ষা মৌসুমের পরই তাদের নিয়ে যাওয়ার। বর্ষা শেষ হয়েছে, এখন শীতকাল শুরুর আগেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে আশা করি” – বলেন মি.আলম।
তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে যারা আগে এসেছেন, তাদের মধ্য থেকে এক লাখ লোককে প্রথমে সেখানে নেয়া হবে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের মতো তালিকাভূক্ত হয়েছেন।
প্রায় ১২শ’ একর জমির ওপর ভাসানচরকে পুরোপুরি বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে বলে সরকার বলছে।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ভাসানচরের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একটি পূর্ণাঙ্গ থানা স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত এই চরে স্থানান্তরের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের আপত্তি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের বুঝিয়ে রাজী করানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিল।
এখন ভাসানচরে পাঠানোর জন্য রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির কাজও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম পর পর দুটি টুইট বার্তায় বলেছেন, ভাসান চর প্রস্তুত।
তিনি বিবিসিকে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন তারা।
যত দ্রুততার সাথে সম্ভব এটা করা হবে জানিয়ে মি. আলম বলেন, “ইউএনএইচসিআর এবং আইওএম এর কর্তাব্যক্তিরা চার মাস আগে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তখন তাদের কাছেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিকল্পনা খুব পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।”
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বা ইউএনএই্চসিআরসহ যে সব আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করছে, তাদের জোর আপত্তি ছিল ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ব্যাপারে।
বাংলাদেশ সরকার এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে কয়েকদফা আলোচনা করেছে। সে সময় এসব সংস্থা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু বিষয় সরকারের বিবেচনার জন্য তুলে ধরেছিল।
ইউএনএইচসিআর এর একজন কর্মকর্তা লুইস ডনোভান বলেছেন, ভাসানচরে স্থানান্তরের আগে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উত্থাপিত বিষয়গুলো সরকার বিবেচনা করবে বলে তারা আশা করছেন।
“ইউএন সব সময় বলে আসছে, এই স্থানান্তর স্বেচ্ছায় হতে হবে এবং সরকার অতীতে সে রকম প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, জায়গাটি বসবাসের উপযোগী কিনা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী – এ বিষয়ে সরকার রোহিঙ্গাদের বিস্তারিত জানাবে। রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের আগে ঐ ভাসান চর পরিদর্শন করিয়ে তারপর তাদের মতামত দেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত।”
যদিও সরকার বলছে যে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার জন্য তালিকাভূক্ত হচ্ছেন, কিন্তু তার পরেও অনেক রোহিঙ্গার মাঝে এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
একজন রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ বলছিলেন, ভাসানচরে তাদের নিরাপত্তা এবং বসবাসের উপযোগী ব্যবস্থা আসলে কতটা নেয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত তাদের আগে জানাতে হবে।
এই রোহিঙ্গা নেতা বলছিলেন, “আগে আমাদের ভাসানচরে নিয়ে গিয়ে সেখানকার পরিবেশ দেখাতে হবে, তাহলে মানুষের বিশ্বাস হবে।”
“চোখে না দেখলে এবং বিশ্বাস না হলে মানুষ কিভাবে সেখানে যাবে?” প্রশ্ন করেন তিনি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অবশ্য বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উত্থাপিত বিষয়গুলোও গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন মেনেই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলছিলেন, “ভাসানচরে যে স্থাপনাগুলো করা হয়েছে, এগুলো যে কোন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আমরা শুধু ঘরগুলো বানাইনি। এমনভাবে বাঁধ দেয়া হয়েছে, যাতে জলোচ্ছ্বাসে কোন ক্ষতি না হয়। তাদের শিক্ষারও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রথমে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে নেয়া হবে।”
এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার চীনের সহায়তায় মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লেগে যেতে পারে বলে বাংলাদেশ মনে করছে। আর সেজন্যই রোহিঙ্গাদের একটা অংশকে ভাসানচরে দ্রুত স্থানান্তর করতে চাইছে সরকার, এমনটাই বলছেন কর্মকর্তারা।
বার্তা কক্ষ, ২৩ অক্টোবর ২০১৯