ঋণখেলাপিদের জন্য আবারও বড় ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যবসায়ীরা চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও ছয় মাস টাকা না দিয়ে খেলাপিমুক্ত থাকতে পারবেন। এতে একজন ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধের জন্য আগের চেয়ে তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় পাবেন।
২০১২ সালে ঋণ নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঋণ শ্রেণীকরণ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের নীতিমালায় পরিবর্তন এনে ঋণখেলাপিদের নতুন করে এ সুযোগ করে দিয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী জুন থেকে।
এদিকে ২ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ঋণখেলাপিরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ শোধ করতে পারবেন। এ জন্য তাদের এককালীন ২ শতাংশ টাকা জমা দিতে হবে। এরপর ১২ বছরের মধ্যে বাকি টাকা শোধ করতে পারবেন। পয়লা মে থেকে নতুন এ সুবিধা কার্যকর হবে।
এর আগে ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চাপে ব্যাংকের করপোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এরও আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমায়।
টানা ৯ বছর ব্যাংকের পরিচালক থাকা ও এক পরিবারের ৪ জনকে ব্যাংকের পর্ষদে থাকার সুযোগ দিয়ে আইনে পরিবর্তন আনে সরকার। সরকারি আমানত বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সীমাও ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। তখন তাঁরা বলেছিলেন, সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনবেন। যদিও সুদ হার এখনো ১৫ শতাংশের বেশি রয়ে গেছে।
২০১৫ সালে ঋণখেলাপিদের জন্য ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ১১টি শিল্প গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করে বড় ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। তবে সুবিধা পাওয়ার পরও দুটি গ্রুপ ছাড়া আর কেউ টাকা পরিশোধ করছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্থায়ী মেয়াদি ঋণের পুরো কিস্তি বা কিস্তির অংশ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করলে তা আরও ছয় মাস পর্যন্ত সময় পাবে। এরপরই এ ঋণকে মেয়াদোত্তীর্ণ বা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। তবে চলতি ও ডিমান্ড ঋণের কিস্তি নির্দিষ্ট মেয়াদে পরিশোধ না হলে তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতের ৯ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে স্থায়ী মেয়াদি ঋণ ৪০ শতাংশের বেশি। আর খেলাপি ঋণের বড় অংশই মেয়াদি ঋণ। এ ঋণ পরিশোধে সময় শেষ হওয়ার পর আরও ৬ মাস করে সময় পাবে। নতুন এ সুবিধার ফলে এসব ঋণের বড় অংশ নিয়মিত ঋণের তালিকায় চলে আসবে। যাতে কমে আসবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
জানা যায়, ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবলোপন ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। (প্রথম আলো)
বার্তা কক্ষ
২২ এপ্রিল ২০১৯