খেলাধুলা

যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে চান ক্রিকেটাররা

ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হয়েছেন ২৭ জন। তবে টাইগার সদস্যদের সবাই অক্ষত রয়েছেন। আজ (শুক্রবার) পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়ে এ ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো তামিম ইকবাল, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামদের।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন অবস্থান করছে ক্রাইস্টচার্চে। শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোরে হাগলি ওভালে স্বাগতকদের বিপক্ষে খেলতে নামার কথা রয়েছে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের।

তার আগে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ক্রাইস্টচার্চে টিম বাসে করে হাগলি পার্কের নিকটে একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন তামিম, মিরাজ, তাইজুল, মুশফিকরা। এসময় তাদের সঙ্গ দিতে সাথেই ছিলেন সৌম্য সরকার, দলের স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ মারিও ভিল্লাভারায়ন, দলের ডাটা অ্যানালিস্ট শ্রিনিবাসসহ বেশ কয়েকজন সদস্য।

হুট করেই স্থানীয় সময় বেলার ১টা ৪০ মিনিটের দিকে বন্দুকধারী এক ব্যক্তি অতর্কিতভাবে ক্রাইস্টচার্চের সেন্ট্রাল মসজিদে ঢুকে এলোপাথারি গুলি শুরু করলে নিহত হন ছয়জন। তবে ঘটনার আকস্মিকতা টের পেয়ে বাস থেকে নেমে দ্রুতই হাগলি পার্ক দিয়ে মাঠে ফিরে যান তামিম-মিরাজরা। এসময় তারা স্থানীয় জনগণকেও সেন্ট্রাল মসজিদের আশেপাশে যেতে নিষেধ করেন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সেখানে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল নিজের টুইটার একাউন্টে লিখেন, ‘পুরো দল গোলাগুলির হাত থেকে বেঁচে গেলো। খুবই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

দলের ডাটা অ্যানালিস্ট শ্রিনিবাস তার টুইটার একাউন্টে লিখেছেন, ‘মাত্রই এক বন্দুকধারীর হাত থেকে রক্ষা পেলাম। এখনো শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হচ্ছে না। ভয় কাজ করছে সর্বত্র।’

মারি ভিল্লাভারায়েন বলেন, ‘আমি ঘটনার পরপরই ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কিছু দেখেনি তবে গুলির আওয়াজ শুনে হাগলি পার্ক দিয়ে মাঠে ফিরে গেছে। কোচিং স্টাফের সবাই টিম হোটেলেই ছিলেন। খেলোয়াড়রা গোলাগুলির শব্দ শুনেই দৌড়ে নিরাপদ স্থানে গিয়েছেন।’

এদিকে এমতাবস্থায় শনিবার সিরিজের শেষ ম্যাচটি মাঠে গড়াবে কি-না সে ব্যাপারে এখনই কিছু জানাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ দলের মসজিদ ত্যাগ করার ভিডিও…

যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে চান ক্রিকেটাররা

যাচ্ছিলেন পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করতে, ফিরতে হয়েছে প্রাণহানির শঙ্কা নিয়ে। এমতাবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আর নিউজিল্যান্ডে থাকতে চান না বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। যত দ্রুত সম্ভব ফিরতে চান বাংলাদেশে।

মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার জেরে বাতিল করা হয়েছে কাল থেকে হ্যাগলি ওভালে শুরু হতে যাওয়া ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কিছু না জানালেও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি) এরই মধ্যে টুইট করে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে।

ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট শেষেই নিউজিল্যান্ড সফর শেষ হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। টেস্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন দ্রুতই ফিরে আসবে বাংলাদেশ দল। কখন তাদের ফেরার ফ্লাইট, সেটি এখনো জানা যায়নি। তবে বিসিবি সূত্র জানিয়েছে, দেশে ফেরার যে ফ্লাইট পাবে সেটিতেই খেলোয়াড়েরা চলে আসবেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড টুইট করেছে, ‘এনজেডসি ও বিসিবির যৌথ সিদ্ধান্তে হ্যাগলি ওভাল (ক্রাইস্টচার্চ) টেস্ট বাতিল করা হয়েছে। দুই দলের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফ সবাই নিরাপদে আছে।’

বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানালেন, আজ দুপুরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন সংবাদমাধ্যমকে।
এদিকে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম নিশ্চিত করেছেন টিম হোটেলে নিরাপদেই আছেন তামিম-মুশফিকরা। তবে তারা কেউই বেশিক্ষণ নিউজিল্যান্ডে অবস্থান করতে চাচ্ছেন না।

তিনি নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেন, ‘আমার মনে হয় না তারা এখন ক্রিকেট খেলার মতো অবস্থায় আছে। তারা যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে চায়। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি যা শুনছি তা থেকেই বলছি।’

ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইসাম আরও বলেন, ‘যখন ঘটনাটা ঘটছিল, তখন একজন ক্রিকেটার আমাকে ফোন করে বললেন যে যাতে আমি পুলিশকে এটি জানাই। কিন্তু আমিও ক্রাইস্টচার্চে নতুন। ফলে জানা নেই কার সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিৎ। তাই আমি একজন অপরিচিত ব্যক্তির গাড়িতে করে কোনোভাবে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে তাদের জানাই। পুরো ঘটনাটাই মর্মান্তিক।’

এদিকে নিউজিল্যান্ডের বর্তমান দলের নয়জন সদস্যই থাকেন ক্রাইস্টচার্চে। বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা যেনো পরিবারের সঙ্গে বাসার মধ্যেই থাকেন। তবে আগামীকালের ম্যাচের ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড।

বার্তা কক্ষ
১৫ মার্চ,২০১৯

Share