Home / জাতীয় / স্বায়ত্তশাসিত ৬৮ সংস্থার ২ লাখ কোটি টাকা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে
taka Note
প্রতীকী

স্বায়ত্তশাসিত ৬৮ সংস্থার ২ লাখ কোটি টাকা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে

স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্বশাসিত ৬৮ সংস্থার উদ্বৃত্ত ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। বিপুল অঙ্কের এই অর্থ ‘অলস’ হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে।

এই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নিতে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন ২০১৯’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত এ আইনটি অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া বৈঠকে ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন আইন ২০১৯’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, আইনটি চূড়ান্ত হলে ওইসব স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয়সহ প্রয়োজনীয় টাকা রেখে বাকি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা নেয়া হবে। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে আছে।

এই টাকাগুলো কোনো ভালো কাজে ইনভেস্ট হচ্ছে না। এজন্য সরকারের পলিসি হল, নতুন আইনের মাধ্যমে কিছু প্রভিশন রেখে বাকি টাকা সরকারি কোষাগারে নিয়ে আসা। আমাদের অনেক প্রজেক্ট আছে, জনকল্যাণমূলক কাজ, যেগুলো আর্থিক সংকটের কারণে ফাইন্যান্স করা যায় না, সেখানে এসব টাকা ব্যয় করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এসব সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ লাগে, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। তাছাড়া আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে।

ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবে। এরপর যে অর্থ বাকি থাকবে, সেটা সরকারের কোষাগারে জমা দেবে। অর্থাৎ ওনাদের বিপদে ফেলা হবে না, ওনাদের প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে বাকিটা দেবে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসনে ‘কোনো সমস্যা হবে না’ মন্তব্য করে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘আর্থিক ডিসিপ্লিনেও কোনো সমস্যা হবে না। এটা হচ্ছে ওনাদের যে আইডল মানি আছে, তা সরকারের ইনভেস্টমেন্টে কাজে লাগানো। আইনি অধিকারও ক্ষুণ্ণ করা হয়নি, ওনাদের যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা তো সরকার দিচ্ছে। পরিচালন ব্যয় হিসেবে কোন সংস্থা কত টাকা রাখবে, তা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে।’

২৫টি বড় প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা (মে ২০১৯-এর তথ্য), পেট্রোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, পিডিবির ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা, রাজউকের ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত আছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বাদ দিলে এ রকম ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা ইতোমধ্যে করা হয়েছে বলে তথ্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। এর মধ্যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ তালিকায় শিক্ষা বোর্ডগুলো রয়েছে।

তাদের অনেক অলস টাকা রয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উদ্বৃত্ত ৪২৫ কোটি টাকা রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আকারে ছোট হলেও ধরনের দিক দিয়ে এ আইন হবে ‘সুপারসিডিং’। অর্থাৎ, অন্যান্য কর্পোরেশনের আইনে যা-ই বলা থাকুক না কেন, তার ওপরও এ আইনের বিধান কার্যকর হবে।’

সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন আইন : মন্ত্রিসভা ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন আইন ২০১৯’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ দিয়ে বিআরটিসি চলছে।

এই অধ্যাদেশকে ঘষামাজা করে আইনে পরিণত করা হয়েছে। এটির খুব বেশি পরিবর্তন নেই, কারণ এটি আগেই অনেক পরিবর্তন করা হয়েছিল।’ আইনে নতুন একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতি যেমন হরতাল, পরিবহন ধর্মঘট, জরুরি অবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশ্ব ইজতেমা, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ এবং অনুরূপ কোনো পরিস্থিতিতে বিশেষ সড়ক পরিবহন সেবা প্রদান করার বিষয়টি বিআরটিসির কাজের মধ্যে নতুন যুক্ত করা হয়েছে।

আর্জেন্ট কাজ হিসেবে বিআরটিসির কাজের অংশ হিসেবে নতুন সংযোজন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন হবে এক হাজার কোটি টাকা। আগে ছিল ছয় কোটি টাকা। আগে পরিশোধিত মূলধন ছিল দুই কোটি টাকা। কিন্তু নতুন আইনে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।

কর্পোরেশন নিজেই এটা ঠিক করবে। তবে এই অঙ্ক অনুমোদিত মূলধনের চেয়ে বেশি হবে না। মূলধনে সরকারি শেয়ারের পরিমাণ থাকবে ৫১ শতাংশ এবং বেসরকারি শেয়ার থাকবে ৪৯ শতাংশ।

এছাড়া বিআরটিসির পরিচালনা পর্ষদে সদস্য সচিবের নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। মোট ২৪ সদস্য নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হবে। এই ২৪ জনের মধ্য সরকার মনোনীত ১২ জন, আট বিভাগের আটজন, শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে তিনজন, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একজন সদস্য থাকবেন।

তবে এর মধ্যে অবশ্যই তিনজন নারী সদস্য থাকতে হবে। বছরে কমপক্ষে চারটি সভা করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এসব সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তিনি না থাকলে ওনার মনোনীত ব্যক্তি সভাপতিত্ব করবেন।

মনোনীত ব্যক্তি না থাকলে অন্য সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে একজন সভাপতিত্ব করবেন। প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরে বার্ষিক সাধারণ সভার বিধান থাকলেও নতুন আইনে কোনো সময় নির্ধারণ করা হয়নি। পরিচালনা পর্ষদ যখন চাইবে, তখনই করতে পারবে।

মানব পাচার প্রতিরোধ প্রটোকলে বাংলাদেশ : জাতিসংঘের মানব পাচার বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধবিষয়ক প্রটোকলে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘মানব ও শিশু পাচার প্রতিরোধ, দমন ও এ সংক্রান্ত শাস্তি প্রদানবিষয়ক জাতিসংঘের প্রটোকলে আমাদের যোগদান সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

আমাদের নিজস্ব যে আইন ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২’ এটা জাতিসংঘের আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে করা হয়েছে। আমাদের আশপাশের দেশগুলো যেমন ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানসহ ১৭৩টি মানব পাচার প্রতিরোধ প্রটোকলে যোগদান করেছে। আমাদের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরাও সেখানে যোগদান করব।’

পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি অনুস্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন চলাকালে ‘ট্রিটি অন দ্য প্রহিবিশন অব নিউক্লিয়ার ওয়েপনস’ অনুস্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ‘ট্রিটি অন দ্য প্রহিবিশন অব নিউক্লিয়ার ওয়েপনস’ স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু এটা অনুস্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। এজন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

আগামী ৭২তম অধিবেশন চলাকালে স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ৭০টি। এর মধ্যে ২৫টি রাষ্ট্র অনুস্বাক্ষর করেছে, বাকিরাও পর্যায়ক্রমে করবে। ২৬ সেপ্টেম্বর সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে, যেদিন ৭৪তম অধিবেশনে অনুস্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।’ (যুগান্তর)

বার্তা কক্ষ, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯