চাঁদপুর

চাঁদপুর আশিকাটিতে সক্রিয় গরু চোরচক্র

** কাজ করছে বড় ধরেনের সিন্ডিকেট
** পাচার হচ্ছে পিকাপ ভ্যানে
** আতঙ্কে রয়েছে গরু পালনকারীরা

চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে গত দু’তিন দিনে প্রায় ১৫টি গরু চুরি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ চোর চক্র বড় ধরনের সিন্ডিকেট বলে মনে করছে এলাকাবাসী। নাইট গার্ড সহ টহল পুলিশের নজরধারী জরুরী বলেও মনে করছে এলাকাবাসী। এসব গরু গোয়াল ঘর থেকে রাস্তায় এনে পিকাপ ভ্যানে করে নিয়ে যায় চোর চক্র।

জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল মধ্য রাতে আশিকাটি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আঃ ওয়াহেদ ভূঁইয়ার ২টি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ১৭ এপ্রিল ১নং ওয়ার্ডের তাজুল ইসলাম খানের ১টি গরু। যার মূল্য ৭০ হাজার টাকা। ২নং ওয়ার্ডের নুরুল আমিন পাটওয়ারীর অষ্ট্রেলিয়ার ২টি গরু। যার আনুমানিক মূল্য ৩ লাখ টাকা। ২নং ওয়ার্ডের বড় শীল বাড়ির তপন চন্দ্রশীলের দুটি গরু। যার আনুমানিক মূল্য ৮০ হাজার টাকা। ১নং ওয়ার্ডের খোকন গাজীর ২০ এপ্রিল ২টি, যার আনমানিক মূল্য ২লাখ। মৈশাদী ইউনিয়নের মালেক মজুমদারের ২টি গরু, যার আনুমানিক মূল্য দেড় লাখ টাকা। এছাড়াও আশপাশ থেকে আরো বেশ কয়েকটি গরু চুরি হয়েছে বলেও জানা যায়।

৬নং ওয়ার্ডের আঃ ওয়াহাব ভূঁইয়ার ছেলে আশিকাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারী ও ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ উজ্জ্বল ভূঁইয়া জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে চোর চক্র এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। প্রায় রাতেই রাত ২টার পরে এ সিন্ডিকেটটি বিভিন্ন স্থান থেকে গরু চুরি করছে। তারা মেইন রাস্তায় পিকাপ ভ্যান রেখে রাস্তার আশপাশের বাড়ির গরু ঘর থেকে গরু নিয়ে এসে পিকাপে করে নিয়ে যায়।

আমাদের গরু চুরি হওয়ার পর আমি নিজ উদ্দোগে এলাকায় মাইকিং করিয়েছি। যাতে করে মানুষ সতর্ক হয়। কিন্তু এরপরও চোর চক্র তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আমি এলাকায় রাতে কয়েকদিন পাহারা দিয়েও চোর চক্রকে ধরতে পারিনি। এরমধ্যে আমি একদিনও টহল পুলিশ দেখতে পাইনি। তাই রাতে টহল পুলিশ তাদের নজরধারী আরো জোর ধার করবে বলে আমি আশা করছি।

১নং ওয়ার্ডের তাজুল ইসলাম খান জানান, আমি অসহায় গরীব মানুষ। কোন রকম কাজ করে খাই। আমার গরুটির ছোট একটি বাছুর আছে। বাছুরটি রেখে গরুটি নিয়ে যায়। এখন বাছুরটি নিয়েও বিপদে আছি। গরুর দুধ বিক্রি করে এবং আমি কোনরকম কাজ করে সংসার চালাই। গরুটি চুরি হওয়ায় আমি একবারেই নিস্ব হয়ে গেছি।

২নং ওয়ার্ডের নূরুল আমিন পাটওয়ারী জানান, আমার দুটি অষ্ট্রেলিয়ার গরু চুরি হয়ে গেছে। আমি প্রায় ৪০-৪৫ বছর যাবৎ গরু পালন করছি। এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম হলো। চোর চক্ররা এভাবে গরু নেওয়া আমি অসহায় হয়ে পরছি। আমার গরুর কাছে আমি ছাড়া আর কেউ যেতে পারেনা। তাই চোর চক্র গরুর নাকে মুখে স্প্রে করে গরুকে আলাবোলা করে তারপর নিয়ে যায়। কিন্তু গরু গুলো নেওয়ার সময় রাস্তায় টহল পুলিশ এমনকি কোন বাজারেরই নাইট গার্ড কেউ নাকি দেখেনা। প্রশাসনের লোকজন যদি ঠিকমতো টহল দেয় তাহলে এ ধরনের চুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

১নং ওয়ার্ডের খোকন গাজী জানান, বহু ধার দেনা করে গরু কিনছি। এখন গরুগুলো চুরি হওয়াতে আমি একেবারেই নিস্ব হয়ে গেলাম। আমি রাত ২টা ৪০ মিনিটেও গরুগুলো গোয়াল ঘরে দেখছি ঠিকমতো আছে।

এরপর ঘন্টাখানিকের মধ্যেই আমার গরু গুলো চুরি হয়ে যায়। আমি আবার গরু ঘরের কাছে গিয়ে দেখি গরুগুলো নেই। আমি সাথে সাথে ডাক চিৎকার করলে আশ পাশের মানুষ সহ হাজীগঞ্জ শাহরাস্তি ও চাঁদপুর হরিনা ঘাট পর্যন্ত রাতেই সিএনজি দিয়ে খোঁজ খবর নেই। কিন্তু কোথাও আর আমার গরুগুলো পেলামনা। বাবুরহাট সহ বিভিন্ন বাজারের নাইট গার্ডদেরকে জিজ্ঞেস করেছি তারাও নাকি গরু নিয়ে যেতে দেখেনা।

ভোক্তভোগীরা আরো জানান, সামনে কোরবানির ঈদকে ঘিরে অনেকেই ধার দেনা করে গরু ক্রয় করছে। যাতে করে কিছু লাভবান হয়ে ঈদে গরুগুলো বিক্রি করবে। কিন্তু যে ভাবে গরু চুরি হওয়া শুরু হয়েছে, তাতে করে এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছে। আমাদের মনেহয় এরা আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্য। তারা নিমিষেই গরু নিয়ে কোথায় চলে যায় তা কেউ দেখতে পায়না।

এভাবে গরু চুরি হলে একসময় আর কেহই গরু পালন করতে আগ্রহী হবে না। তাই পুলিশ প্রশাসন যদি টহল দেয় এবং বিভিন্ন বাজারের নাইট গার্ডরা যদি সতর্ক থেকে ঠিকমতো কর্তব্য পালন করে তাহলে এ ধরনে ঘটনা ঘটবেনা বলে মনে করছে এলাকাবাসী।

স্টাফ করেসপন্ডেট
২৫ এপ্রিল ২০১৯

Share