ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে পেট্রোল ঢেলে ধানে আগুন দিলো ক্ষুব্দ কৃষকরা

ফরিগঞ্জে সরকারি মূল্যে খাদ্যে গুদামে ধান বিক্রি করতে না পেরে ক্ষুদ্ধ কৃষক তার কষ্টার্জিত ফলনের ধানে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্ষুদ্ধ এক কৃষক।

সরকারি খাদ্যে গুদামে একাধিক চেষ্টা করেও ধান বিক্রি করতে না পেয়ে ধানে আগুন দিতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সন্ধায় ফরিদগঞ্জের ১৫ নং রুপসা (উত্তর) ইউনিয়নের ভাটেরহদ গ্রামে।

ক্ষুদ্ধ কৃষক কর্তৃক তার ধানে আগুন দেয়ার খরব পেয়ে বুধবার (৭ আগস্ট) সকালে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ ও দুই উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নুরে আলম ও মোঃ ফখরুল ঘটনাস্থুল ছুটে গিয়ে ধানে আগুন দেয়ার কারন জানতে চান কৃষকের কাছ থেকে ।

সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উক্ত গ্রামেরই একদল বিক্ষুদ্ধ কৃষক কয়েক মণ ধান ভাটেরহ স্কুলের সামনের রাস্তায় ফেলে তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সরকারি ভাবে ধানে বিক্রি করতে না পেরে ক্ষুদ্ধ কৃষকরা ধানে আগুন দিয়ে তাদের নীরব প্রতিবাদ করে বলে জানিয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ক্ষুদ্ধ কৃষক সহিদুল্লা ও মোশারফ তাদের ধানে আগুন দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, একাধিক বার খাদ্যে গুদামে ধান নিয়ে গিয়ে চেষ্টা করেছি সরকারি দামে ধান বিক্রি করতে। কিন্তু খাদ্যে গুদাম কর্তৃপক্ষ থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় আবার সেই ধান নিজের খরচে বাড়িতে আনতে বাধ্য হই ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত কৃষক তার কৃষি কার্ড পেয়েও গোপন সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ে সব কৃষক সরকারি দামে ধান বিক্রি করতে পারছে না। গোপন একটি সিন্ডিকেট পছন্দের লোকদের কাছ থেকেই ধান ক্রয় করছে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। আর এ সুযোগে প্রকৃত কৃষক না হয়েও ক্ষমতার দাপটে বেপারীর কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা : ছবি- চাঁদপুর টাইমস

এদিকে কতজন কৃষকের কাছ থেকে সরকারি মূল্যে ধান ক্রয় করা হয়েছে তার সঠিক কোন তালিকা উপজেলা কৃষি বিভাগ কিংবা খাদ্যে গুদামে যোগাযোগ করেও ওই তালিকা পাওয়া যায়নি।

খাদ্য গুদাম সুত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মে থেকে প্রতি মণ ধান প্রায় ১ হাজার ৯০ টাকায় ক্রয় শুরু হয়ে। ফরিদগেঞ্জর একটি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ন থেকে মোট ৭শ ৫০ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ১৫ নং দক্ষিন রুপসা (উত্তর) ইউনিয়নের কৃষক থেকে মোট ৫০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করার কথা রয়েছে।

কিন্তু এই ইউনিয়নের কোন কৃষক থেকে কত মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক জানায়, শুনেছি সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করতে খাদ্যে গুমাদে নিয়ে তা বিক্রি করতে না পেরে ক্ষুদ্ধ হয়ে কৃষক তার ধানে আগুন দিয়েছে। আমার ইউনিয়ন থেকে ৫০ মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সরকারি মূল্যে নেয়ার কথা। কিন্তু কার কাছ থেকে ওই ধান ক্রয় করা হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট ভাবে কেউ বলতে পারছে না।

এ ব্যপারে ফরিদগঞ্জ সরকারি খাদ্যে গুদামের কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সুমন সাহা জানান, ‘গোপন সিন্ডিকেট করে বেপারী কিংবা পছন্দের লোকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার বিষয়টি সঠিক নয় উল্লেখ করে বলেন, কৃষকের কাছ থেকে শতকরা ১৪ আদ্রতা থাকা সম্পন্ন ধান ক্রয় করার বিধান রয়েছে। ধানে ওই আদ্রতার কম থাকলে তা ক্রয় করা সম্ভব নয়।’

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফখরুল জানান, সরকারি খাদ্যে গুদামে কৃষক সকল নিয়ম মেনেই তার ধান এনেও তা বিক্রি করতে না পেরে ওই ধানে আগুন দেয়ার বিষয়টি জেনে আমি তাৎক্ষণিক আমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্যারকে জানিয়েছে।’

এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মমতা আফরিন বলেন, ‘ধানে আগুন দেয়ার ঘটনাটি আমি শুনেছি। ধানে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি খুবই দুঃখ জনক। কিন্তু কৃষক কেনো তার ধানে আগুন দিবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে বলেছি।’

প্রতিবেদক- শিমূল হাছান, ৮ আগস্ট ২০১৯

Share