চাঁদপুর

বিনা বেতন ও পুষ্টিকর খাবারে চাঁদপুর জিকে উবির অর্ধ-সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান

চাঁদপুর জেলা শহরের ১০কি.মি.উত্তরে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে আমিরাবাদ জিকে উচ্চ বিদ্যালয়ে অন্তত দু’যুগ ধরে অর্ধসহস্রাধিক ছাত্রী বিনা বেতনে অধ্যয়ন করে যাচ্ছেন। ১৯৯৩ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রীদের বেতন দিতে হয় না। সব ছাত্রীদের বাৎসরিক টিউশন ফি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম কবির চৌধুরীর নিজস্ব অর্থায়নে বহন করা হয়। গোলাম কবির চৌধুরী দেশের একজন সিআইপি ও শিল্পপতি।

১৯৬৭ সালে ১.৮০ একর ভূমির ওপর তাঁরই পিতা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী ওরফে ধলা মিঞা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের অজো পাড়াগাঁয়ের শিক্ষা বিস্তারে এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এটি ছিল একটি জুনিয়ার হাই স্কুল।

তাঁর নামানুসারেই স্কুলটির নাম রাখা হয় আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। সংক্ষেপে বলা হয় জিকে উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটিতে বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ৫ জন কর্মচারী ও ৭ শ’জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর ৭০% ছাত্রী। যারা অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের মেয়ে।

তৎকালীন এলাকার কৃতিসন্তান, রাজনীতিবিদ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল কাদের মাস্টার ছিলেন এটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধানশিক্ষক। তাঁরই কর্মতৎপরতায় প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরহুম গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর একান্ত অনুপ্রেরণায় ও শিক্ষাবিস্তারে আন্তরিকতায় ৩ বছরের মাথায় কুমিল্লা বোর্ডের অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে এটি একটি হাই স্কুলে রূপান্তরিত হয়।

১৯৯৩ সালে এ এলাকার শিক্ষানুরাগী ও সমাজহিতৈষী মরহুম গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী ওরফে ধলা মিঞা মৃত্যুবরণ করলে তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি আজকের সভাপতি, সিআইপি,শিল্পপতি ও সমাজসেবক গোলাম কবির চৌধুরী এর পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই থেকেই আমিরাবাদ জিকে উচ্চ বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষাবিস্তারে আলোকবর্তিকা হিসেবে চাঁদপুর সদরে দিন দিন সাফল্যতার স্বাক্ষর রেখে এগিয়ে চলছে।

প্রত্যেক কর্মরত শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ যেন একই সূতায়গাঁথা। এলাকার শিক্ষার প্রসারে আমিরাবাদ জিকে উচ্চ বিদ্যালয়টির সবাই এক ও অভিন্ন মতামতের কারণে শিক্ষার একটি চমৎকার পরিবেশ বিদ্যমান রয়েছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সমাজসেবক গোলাম কবির চৌধুরী দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই সকলের সার্বিক সহযোগিতায় সকল অধ্যয়নরত ছাত্রীদের তাঁর স্কুলে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ করে দেন।

সকল শিক্ষার্থীদের মাসে অন্তত: দু’বার পুষ্টির চাহিদা পূরণে নিজ খরচে পুষ্টিকর খাবার শ্রেণিকক্ষে সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি অধিকতর আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে গোলাম কিবরিয়া ও মরহুম আলহাজ্ব রোস্তম আলী বেপারী কল্যাণ স্ট্রাস্ট গঠন করেন।এর মাধ্যমে বার্ষিক পরীক্ষার ভালো ফলাফল করা,জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস প্রাপ্ত মেধাবীদের শিক্ষা উপকরণের ব্যয়ভার মিটাতে শিক্ষা উপবৃত্তির প্রচলন করেন।যা এখনও চলমান রয়েছে।

পাশাপাশি প্রাক্তন প্রতিষ্ঠিত ছাত্রগণ বিগত কয়েক বছর ধরে গরীব শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার ফি প্রদানসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।

শিক্ষকগণ বর্তমান নতুন কারিকুলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পাঠদান,বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান ও আধুনিক মান সম্মত ল্যাবটরির ব্যবহারে, ডিজিটাল কন্টেইনের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় আন্তরিক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ২০১৮ সালে শুরু হয় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব।

যার ফলে ও শিক্ষকদের আন্তরিকতায় ও শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রচেষ্টায় বিগত ১০ বছরের মধ্যে ৬ বারই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাশ ও উল্লেখ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী এ প্লাস পেয়েছে। স্কুলের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ,বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যগণ অত্যন্ত সজাগ ভূমিকা পালন করে আসছে।

স্কুলটির প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল কাদের মাস্টার,মরহুম আজিজুল্লাহ, মরহুম সিরাজুল ইসলাম,বাবু ভূবেনশ্বর পাল,মো. তাবারক উল্লা প্রমুখ।প্রাক্তন ছাত্রের মধ্যে অনেকেই যাঁরা এখন প্রতিষ্ঠিত তাঁদের মধ্যে প্রকৌশলী গোলাম মাওলা চৌধুরী,ডা.গাজী গোলাম মোস্তফা,ডা.দেলোয়ার হোসেন,লন্ডন প্রবাসী ড.আনিছুর রহমান, কৃষি বিভাগের আলু গবেষণাগারের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন ও মো. হাসান বসরী অন্যত্তম।

এ ছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশের পুলিশ ,নৌ, সশস্ত্র বাহিনীসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ পেয়েছে।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আলাউদ্দিন চাঁদপুা টাইমসকে বলেন ,‘স্কুল পরিচালনা ও এলাকার শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে সভাপতি মহোদয়সহ সকল সদস্য ও শিক্ষকগণ খুবই আন্তরিক। এলাকার শিক্ষা প্রসারে তাঁদের নিরন্তর প্রচেষ্ঠার জন্যে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। আমি ও আমার শিক্ষকগণ সর্বদাই কো-কারিকুলাম কর্মকান্ডগুলো যথা জাতীয় দিবস সমূহ যথাযথভাবে উদযাপন,দৈনন্দিন সমাবেশ,বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, জেলা-উপজেলায় পর্যায়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে সরব অংশগ্রহণ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করছি।’

তিনি আরো বলেন,‘স্কুলটিতে বর্তমানে শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নামাজের ব্যবস্থাও অনুপস্থিত। এ ব্যাপারে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহতী ব্যাক্তিবর্গের সু-দৃষ্ঠি কামনা করছি।’

প্রতিবেদক : আবদুল গনি
১১ জুলাই ২০১৯

ডিএইচ

Share