চলমান পবিত্র রমজান মাসেও ভেজাল খাদ্যপণ্য ও নানাবিধ ফল,তরিতরকারি ও মাছ প্রভৃতি দেদারছে খোলা বাজারেই বিক্রি হচ্ছে। এসব খেয়ে মানুস নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে। যে ফল দিয়ে ইফতার করবে সেই ফলেই ভেজাল বা ফরমালিন মেশানো। অধিক মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী এ কাজটি করে থাকেন।
অন্যদিকে সম্প্রতি বিএসটিআই’র ল্যাবে পরীক্ষায় ধরা পড়া ৫২টি নিম্নমানের খাদ্যপণ্য। যেগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং এ সব খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জানা গেছে , বাজার থেকে ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর বিএসটিআই সম্প্রতি ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। যার মধ্যে ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমানের বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশের অনেক নামি-দামি ব্র্যান্ডের তেল, ঘি, সেমাই, নুডলস, মসলা, পানিসহ বিভিন্ন পণ্য। ভোক্তারা এতদিন বাজার থেকে এসব নামি ব্র্যান্ডের পণ্য নিশ্চিন্তে কিনে খেয়েছেন।
স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে,দেশের নামি-দামি ব্র্যান্ডের খাদ্যপণ্যই যদি নিম্নমানের ও ভেজাল মিশ্রিত হয়, তাহলে ব্র্যান্ডহীন বা অজানা-অচেনা ব্র্যান্ডের পণ্যের কী অবস্থা হতে পারে । বাজারের অসংখ্য খাদ্যপণ্যের মধ্যে এ ৫২ টিই নিম্নমানের নয়।
সম্প্রতি বাজার থেকে সংগৃহীত কাঁচা তরল দুধের ৯৬ টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। বস্তুত ধারণা করা হয়ে থাকে-বাজারের অধিকাংশ খাদ্যপণ্যই নিম্নমানের বা ভেজালমিশ্রিত অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত।এসব খাবার খেয়ে ভোক্তারা নিজেদের অজান্তেই নানা দুরারোগ্য ও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের অনেকেরই অকালে মৃত্যু হচ্ছে। বুঝে উঠার আগেই জীবনের করুণ পরিণতি বয়ে আনছে। যে খাদ্য মানুষ সুস্থ্য বা বেঁচে থাকার জন্যে খায়্। সেই খাদ্যই মৃত্যু ডেকে আনে।
চিকিৎসকদের মতে,এ ফরমালিনযুক্ত খাবার খেলে চোখের রেটিনা আক্রান্ত হয়ে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে,বদহজম,তাৎক্ষণিকভাবে পেটের পীড়া,হাঁচি,কাঁশি,শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া,আলসার,
চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে লিভার,কিডনি,হার্ট,ব্রেনস্ট্রোকসহ সর্ব কিছুকেই ধ্বংস করে দেয়।পাকস্থলী,ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ,এমনকি ব্লাড ক্ল্যান্সারও হতে পারে। এতে মৃত্যু অনিবার্য।
ফরমালিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী সব বয়সী মানুষের জন্যেই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ নষ্ট,বিকলাঙ্গতা,এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হয়। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা,বাচ্চার জন্মগত দোষক্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
তাই খাদ্যে ভেজাল দেয়া একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। এ অপরাধীদের গুরুদ-ই কাম্য। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে তা’ আরও কঠোর করতে হবে। সবচেয়ে বড় কাজ হল আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
দেশে রমজান মাসসহ বিভিন্ন সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে সারা দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। তাছাড়া এসব অভিযানে ভেজাল পণ্য বিক্রির দায়ে যে সাজা দেয়া হয় তা মোটেই গুরুদ- নয়। ফলে ভেজাল প্রতিরোধে এসব অভিযানের কার্যকারিতা সামান্যই।
সরকারের কাছে প্রত্যাশা- মাদকের বিরুদ্ধে যেমন যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঠিক তেমনি খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হউক। এরইমধ্যে এ নিয়ে হাইকোর্ট’র বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে সরকার অবিলম্বে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আমরা আশা করতে পারি।
সুতরাং ভেজাল খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ উচিৎ ।
সম্পাদকীয়
১৭ মে ২০১৯