চাঁদপুর শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী খুনের ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন,আসামী আটকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং চাঁদপুর মডেল থানসহ একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
বুধবার (২৪ জুলাই ) এক প্রেস ব্রিফিং এ চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো.জিহাদুল কবির সাংবাদিকদের জানান, জয়ন্তী হত্যা/কাণ্ডের তদন্ত চলছে দ্রুত গতিতে। সন্দেহভাজন একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আবার কয়েকজনকে ছেড়েও দিয়েছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এ ঘটনায় আমরা একটি টিম করেছি।তারা তাদের কাজ করছে। ধর্ষণের কোনো আলামত আছে কিনা তা পোস্টমাটাম রিপোর্টের পর জানা যাবে। খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত ছুুরি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। বিষয়টি কিছুটা ঈঙ্গিত করছেন ময়নাতদন্তকারী চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আরএমও ডা.হাসিবুল হাসান।
তিনি আরো জানিয়েছেন-ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে সবকিছু পরিস্কার হবে । এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অনুপ চক্রবর্তী জানায়,আমাদের কাছে এ মূহুর্তে কোনো খবর নেই। থাকলে আমরা অবশ্যই জানাবো।
এদিকে চাঁদপুর শহরের আলোচিত ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী হত্যার একদিন পর তার স্বামী অলোক কুমার গোস্বামী বাদী হয়ে সোমবার (২২ জুলাই) চাঁদপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৪১। মামলায় আসামী হিসেবে অজ্ঞাত খুনিকে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে জয়ন্তী চক্রবর্তীর হত্যাকান্ডের ঘটনায় মানবন্ধন করেছে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও ফেডারেশন অফ জেলা কিন্ডার গার্ডেন এসোসিয়েশন। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে আসামীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানবন্ধনে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ২৪ ঘন্টা ও কিন্ডার গার্ডেন এসোসিয়েশন ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম প্রদান করে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে তারা।
এ ব্যাপারে নিহত জয়ন্তী চক্রবর্তীর স্বামী অলোক চন্দ্র গোস্বামী জানায়,আমাদের জানা মতে এরকম কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা যে আমার স্ত্রীকে খুন করতে পারে। তবে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমি তাদের শাস্তি দাবি করছি। জয়ন্তী চক্রবর্তী হত্যাকান্ডটি রহস্যে ঘেরা। ১৫ জন আনসার সদস্য প্রতিদিন কোয়াটারের প্রধান ফটকে ডিউটি করে। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে খুনি বা খুনিরা কীভাবে হত্যাকান্ড করে পালিয়ে গেলো এমন হাজারো প্রশ্ন জনমনে।
এদিকে জানা গেছে- প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি কোয়াটারগুলোর আশ-পাশে পরিস্কারের জন্য সরকার থেকে বাজেট দেয়া হয়। কিন্তু কোয়াটার এলাকায় ঢুকে দেখা গেছে এ যেনো ‘আমাজন গহিন জঙ্গল ’। তাহলে সরকারি বরাদ্দের টাকা গেলো কোথায়?
তাছাড়া আরো জানা গেছে-জয়ন্তী চক্রবর্তী যে ভবনে খুন হয়েছে সে ভবনটি অনেক আগেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরিত্যাক্ত একটি ৪তলা ভবনে শুধু এ পরিবারটি কীভাবে বসবাস করে আসছিলো তা অনেককেই ভাবিয়ে তুলছে। নিহতের স্বামী, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, প্রতিবেশি কারোরই কোনো বিষয়ে সন্দেহ জাগছে না যে, খুনের পেছনে কি কারণটি থাকতে পারে।
মামলার এজাহারে সূত্রে বাদী অলোক গোস্বামী উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন রোববার সকাল সোয়া ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে ৯ টার ঈগলে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। সাথে তার ছোট মেয়ে পর্ণা গোস্বামী তন্বী ছিলো। তন্বী এবার চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। সে ঢাকা কোচিং করবে । সে জন্যে তাকে নিয়ে বড় মেয়ে অনন্যা গোস্বামীর কাছে যাচ্ছিলেন বাবা অলোক গোস্বামী।
রোববার সকালে যখন তিনি ছোট মেয়েকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন তখন তার স্ত্রী বাসার নিচে গেইট পর্যন্ত এসে তাদেরকে বিদায় জানান জয়ন্তী। ঈগল-৩ লঞ্চে উঠে পৌনে ৯ টার দিকে তিনি তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে জানান যে,তারা লঞ্চে উঠেছেন। এটাই জয়ন্তী চক্রবর্তীর সাথে স্বামী অলোক কুমার গোস্বামীর শেষ কথা।
এরপর ঢাকা গিয়ে বড় মেয়ের বাসায় পৌঁছে স্ত্রীকে জানানোর জন্যে তিনি ফোন দেন। তখন সময় হবে দুপুর ২ টা। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে স্ত্রী আর ফোন রিসিভ করেন নি। ফোন কয়েকবার করেছেন, রিং হয়েছে, কিন্তু রিসিভ হয় নি। তখন তিনি (স্বামী) ভেবেছেন,স্ত্রী তো এখন স্কুলে,মোবাইল হয়ত তার ব্যাগের ভেতরে,সে জন্যে আওয়াজ শুনছে না হয়তো।
বিকেল ৪ টার দিকে অলোক কুমার গোস্বামী তার অফিসের স্টাফ থেকে ঘটনা শুনতে পান। পরে তিনি তার তিন সন্তানকে নিয়ে রাতে চাঁদপুর চলে আসেন।
মাজহারুল ইসলাম অনিক
২৪ জুলাই ২০১৯