আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের জ্বর মাপার জন্য সামান্য একটা থার্মোমিটার ছাড়াই চলছে রোগীদের চিকিৎসাসেবা। সামান্য এ যন্ত্রের অভাবে রোগীদের বাহিরে থেকে জ্বর মাপার পরামর্শ দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলাসহ গ্রামাঞ্চলের মানুষজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে সর্ব প্রথমে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হন। কিন্তু সেখানে গিয়ে সাধারণত রোগীরা অনেক যন্ত্রপাতি না থাকার অজুহাত শুনতে পান।
যেখানে জরুরী বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে নেয়ার জন্য যেখানে দুটি টলি দরকার দেখা যায় সেখানে একটি মাত্র টলি দিয়ে রোগীদের বিভিন্ন বিভাগে উঠা নামা করানো হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন রোগে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই বিভাগে একাধিক রোগী ভর্তি হয়। তখন দেখা যায় একটি টলি থাকার কারনে অন্য রোগীদের ব্যথার যন্ত্রণা নিয়েই জরুরী বিভাগে দীর্ঘসময় ধরে টলির জন্যে অপেক্ষায় থাকতে হয়।
এর বাইরেও অনেক সময় অনেক রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ যারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডিউটি করে থাকেন তারা অনেক রোগীদের কাছ থেকে সরকারি ভর্তি ফি ২০ টাকার পরিবর্তে অনেক রোগীর লোকজনের কাছে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ কিংবা ১শ টাকা করে নেন।
রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য সরকারি ভাবে এসব ব্রাদারদের দায়িত্ব থাকলেও তারা অনেক সময় রোগীদের কাটা ছেড়া সেলাই এবং সেলাই কাটার জন্যও রোগীদের কাছে ১ শ ২ টাকা করে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত কয়েকমাস ধরে দেখা যায়, রোগীদের চিকিৎসাসেবা জন্য জরুরি বিভাগে ওজন মাপার মেশিন, পেশার মেশিন, টর্চলাইট থাকলেও একজন রোগী কত ডিগ্রি জ্বরে আক্রান্ত আছেন তা মাপার জন্য কোন থার্মোমিটার নেই। তাই যা হবার তাই হচ্ছে, চিকিৎসকের আন্দাজের ওপরই ভরসা করে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
গত ২৭ জুলাই চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কস্থ সালমা বেগম নামে এক নারী তার তাসপিয়া নামে ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তান জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ডিউটিরত ডাক্তারকে বলেন তাসপিয়ার কত ডিগ্রি জ্বর রয়েছে তা মেপে তাকে ঔষধ দেয়ার কথা বলেন।
কিন্তু থার্মোমিটার না থাকায় কর্মরত চিকিৎসক তার জ্বর মাফতে পারেননি।
এ ব্যাপারে চিকিৎসক নাজমুল আবেদি জানান, ‘জরুরি বিভাগে কোন থার্মোমিটার নেই। পরে তিনি তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শিশু তাসপিয়াকে ঔষধ লিখে দেয়ার পর বাহিরে থেকে জ্বর মাফিয়ে ঔষধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। পরে ওই নারী বাহিরে থেকে শিশুটির জ্বর মাফিয়ে দেখেন শিশু তাসপিয়ার ১শ’ ২ ডিগ্রি জ্বর রয়েছে। শুধু ওই শিশু রোগী তাসপিয়া আক্তারই নয় একই ভাবে আরো অনেক রোগীকে এভাবে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। জনগণের সেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসাখ্যাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা এবং তদারকির অভাবে এভাবেই সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শত শত মানুষ।
অথচ বর্তমান সরকারের তুলনায় চিকিৎসাখ্যাতে ব্যাপক আগ্রহ এবং যতেষ্ট বরাদ্দ রয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য সরকারি ভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবজ্ঞা আর অবহেলায় সরকারের সে উদ্দ্যেগ যেনো বেস্তে যাচ্ছে।
একটি জেলার প্রধান চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র হচ্ছে আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর এই সরকারি জেনারেল হাসপাতালটি অথচ এমন একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেই জ্বর মাফার যন্ত্র থার্মোমিটার
এ বিষয়ে গত ১ আগস্ট কথা হয় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ প্রদীপ কুমার দত্তের সাথে। জরুরী বিভাগে থারমোমিটার না থাকার বিষয়টি তাকে জানালে তিনি বলেন, ওই বিভাগে তো থারমোমিটার থাকে হয়তো হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেছে নয়তো বা নষ্ট হয়ে গেছে এ কারনে হয়তো তা পাওয়া যায়নি। পরে তিনি প্রতিবেদকে উপস্থিতিতে তাৎক্ষণিক পিয়নকে ডেকে জরুরি বিভাগে একটি থার্মোমিটার দেয়ার কথা বলেন।
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ ১: ০০ এএম, ৪ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ