‘কর্মস্থলে সঠিক সময়ে আসে না’ এমন অভিযোগে শোকজ কিংবা জবাব না চেয়েই হিসাব সহকারী পদ থেকে মেহেদী হাসান নামে এক ব্যক্তিকে চাকুরিচ্যুত করেছে ফরিদগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
বেআইনী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সহ গর্ভনিং বডির মোট ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে চলতি মাসের ২০ জুলাই চাঁদপুরের আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান।
এ নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন মহলে অধ্যক্ষের পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান গত ২০১৪ ইং সনের ১৫ সেপ্টেম্বর অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদে উক্ত মাদ্রাসায় যোগদান করেন। যোগদানের পর মেহেদী হাসানের ইনডেক্স নাম্বার হয় ২১০৭১৮৬। এরই মধ্যে হঠাৎ করেই ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ডঃ মাওলানা এ কে এম মাহাববুর রহমান গত মাসের ২১ এপ্রিল মাদ্রাসায় ডেকে এনে মেহেদীর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা উত্তোলন করে দেয়ার কথা বলে একটি সাদা কাগজে মেহেদী হাসানের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়।
পরবর্তীতে জানা যায় এই সাদা কাগজটিতে মেহেদী চাকুরী থেকে স্বেচ্ছায় অব্যহতি নিয়েছে বলে ৭ জুলাই মৌখিক ভাবে মেহেদী হাসানকে অধ্যক্ষ জানায়, ‘তোমার চাকরি নেই’।
এক পর্যায়ে বিষয়টি সর্বমহলে ফাঁস হওয়ার পর মেহেদীর স্বাক্ষর করা সেই সাদা কাগজটি উদ্ধারের জন্য চলতি মাসের ৩ জুলাই চাঁদপুরের আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন মেহেদী নিজে। একই সাথে উক্ত ঘটনার অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি দায়ের করেন যার নং ৩২৫ তাং ৯ / ৭/ ২০১৭ইং।
শুধু অধ্যক্ষের বেআইনী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ গর্ভনিং বডির মোট ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে চলতি মাসের ২০ জুলাই চাঁদপুরের আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেদী হাসানের কাছ থেকে কৌশলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। স্বাক্ষর করা এই সাদা কাগজটি পরে টাইপ করা হয়েছে। টাইপ করা কাগজটিই স্বেচ্ছায় চাকুরী থেকে মেহেদী অব্যহতি দিয়েছে বলে অধ্যক্ষ দাবি করছেন। অথচ চাকরির বিধিতে রয়েছে যে কোন ব্যক্তি তার চাকুরী থেকে অব্যহতি নিতে হলে অব্যহতি পত্রটি অবিশ্যই হতে হবে স্বহস্থে লিখিত। এ ক্ষেত্রে টাইপিং করা কোন অব্যহতি পত্রই গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গোপন সমজোতার মাধ্যমে উক্ত পদে পুনরায় অন্য লোক নিয়োগ দেয়ার জন্যই মূলত তুচ্ছ অভিযোগে মেহেদী হাসানকে চাকুরিচ্যূত করার করছে এ চক্র। বিষয়টি সমজোতা করার জন্য মেহেদির পক্ষে বহু চেষ্টা করার পর তা ব্যর্থ হয়েছে।
এ ব্যাপারে উক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ডঃ মাওলানা এ কে এম মাহাবুবুর রহমান উক্ত বিষয়ে কোন রিপোর্ট পত্রিকায় না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘মেহেদী হাসান সঠিক সময়ে মাদ্রাসায় আসে না। তার ইচ্ছে মতেই মাদ্রাসায় আসে আর যায়। এতে করে মাদ্রাসার দাপ্তরিক কাজের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হয়েছে।’
এসময় তিনি মেহেদীর স্বাক্ষরিত টাইপ করা ওই পদত্যাগ দেখিয়ে বলেন, ‘মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তক্রমে মেহেদী হাসানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’
চাকরি ছাড়ার ক্ষেত্রে স্ব-হস্তে লিখিত পদত্যাগপত্র ছাড়া অন্য কোনভাবে লেখা পদত্যাগ পত্রগ্রহণ যোগ্য কিনা এ প্রশ্নে অধ্যক্ষ কোনো উত্তর দেননি।
ফরিদগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩: ৫০ এএম, ২৫ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur