চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী, আশিকাটি, কল্যাণপুর, বাগাদী ও তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের কিছু অংশ চাঁদপুর পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত করার ব্যাপারে জনগণের মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে সোমবার (১৮ এপ্রিল ) গনশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণশুনানিতে মৈশাদীসহ ৫টি ইউনিয়নেই চাঁদপুর পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত না করার জোরালো দাবী জানান স্থানীয় জনগণ। তারা ইউনিয়ন পরিষদের সাথে থাকার পক্ষেই তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
গণশুনানি নেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান। বেলা সাড়ে ১১টায় আশিকাটি ইউনিয়ন পরিষদে আশিকাটির ইউনিয়নের ব্যাপারে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে আশিকাটি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডসহ কিছু অংশ পৌরসভায় নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ওয়ার্ডসহ ইউনিয়নবাসীর মতামত নেওয়া হয়।
সেখানে উপস্থিত এলাকাবাসী এক বাক্যে নতুন ভাবে আশিকাটি ইউনিয়নের বর্ধিত অংশ পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য তারা দাবি জানান। এর কারণ হিসেবে এলাকাবাসী বিগত দিনে আশিকাটি থেকে যে অংশটুকু পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, সে অংশে কোন প্রকার উন্নতির ছোঁয়া না লাগায় তারা এ দাবি করেন।
এ ছাড়াও ইউনিয়নের একমাত্র চাঁদখার বাজার পৌরসভায় পড়ে গেলে ইউনিয়নের আয় কমে যাবে বলে উপজেলা নিবাহী কর্মকতার কাছে জোরালোভাবে দাবি করেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন ইউপি মো. চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মাস্টার, ১নং ওয়ার্ড ইউপি দুলাল মাল, ২নং ওয়ার্ড লোকমান মুন্সি, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ছোবহান মাষ্টার, আশিকাটি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সেলিম মাল, এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন হাফেজ খান, তাহের মাল, মো. জসিমউদ্দিন সরকার, রাজ্জাক মাল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সচিব সুলতান মাহমুদ, ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক জাকির বেপারী, নব নির্বাচিত ইউপি মেম্বার বিল্লাাল মাল, সেনগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ আজিজ, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম খানসহ ইউনিয়ননের সর্বস্তরের মানুষ গনশুনানীতে উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২টায় মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয় । সেখানেও গণশুনানি নেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান ।
গণশুনানিতে বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মো. সালে অলি পাটওয়ারী, এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন মৈশাদীর গন্যমান্যব্যক্তি এনায়েত উল্লাাহ খোকন, ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি মেম্বার বজলুল গনি জিলন,৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ ফরিদ উদ্দিন পাটওয়ারী ১নং ওয়ার্ডের শ্রমিকলীগ নেতা লোকমান হোসেন লাকু,।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সচিব আবু বকর সিদ্দিক (মানিক), ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা খায়রুল আলম চৌধুরী (কামাল), হামানকর্দীও খায়রুল বাশার, ১নং ওয়ার্ড মেম্বার নবানির্বাচিত হাকির গাজী, ২নং মেম্বার আবুল কালাম বেপারী , ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফারুক সরকার, ৬নং ওয়ার্ডেও বিল্লাাল হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার জাকির হোসেন, ৮নং মেম্বার ইউনুছ বেপারী, ৪নং ওয়ার্ডেও মোশারফ হোসেন, ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন, ১নং ওর্য়াড মেম্বার চুন্নু ভুঁইয়া, ইউপি সদস্য জাহেদা বেগমসহ এলাকার শত শত লোক স্বতঃস্ফুর্থ ভাবে গনশুনানীতে অংশ নিয়ে মৈশাদী ইউনিয়নকে পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি করেন।
মৈশাদী ইউনিয়নবাসী বলেন, বিগত দিনে মৈশাদী ইউনিয়নের বিশাল অংশ কেটে নেওয়া হয়। পৌরসভায় যে অংশটুকু বর্ধিত করা হয়েছে তার পুরোটাই অবহেলিত । পৌরসভার কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা বরং উল্টো তাদের ট্যাক্স এর পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও মৈশাদী ইউনিয়নের উল্লেখিত অংশটুকু পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত হলে ইউনিয়ন থেকে কৃষি জমি কমে যাবে, ইউনিয়ন পরিষদের পরিধি ছোট হবে ।
এসব নানা কারণ দেখিয়ে তারা জোরালোভাবে পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত না করার দাবি করেন। মৈশাদী ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ লোক পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত না করার পক্ষে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন ।
মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবু বকর সিদ্দিক (মানিক) বলেন , গনশুনানীতে জনগনের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল । শুনানিতে অধিকাংশ মানুষ চাঁদপুর পৌরসভায় অন্তর্ভুক্তি না করার পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন ।
দুপুর ১টায় ৩নং কল্যাণপুর ইউনিয়নে গনশুনানীতে বক্তব্য রাখেন ইউপি মেম্বার মিজানুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সচিব প্রবাহ চন্দ্র ঘোষ, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা এস এম এম রাজ্জাক প্রমুখ।
এ সময় সদর উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান প্রতিটি ইউনিয়নে সাধারন মানুষের বক্তব্য শুনেন এবং তা লিপিবদ্ধ করেন । এরপর বিকালে তিনি বাগাদী ও তরপুচন্ডী ইউনিয়নে গনশুনানী করেন। সেখানেও পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত না করার দাবী করেন স্থানীয় জনগন।
গণশুনানী সম্পর্কে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান বলেন, যে সব ইউনিয়নে গণশুনানী করা হয়েছে সেসব এলাকার অধিকাংশ লোক নতুনভাবে চাঁদপুর পৌরসভার সাথে অর্ন্তভুক্তির ব্যাপারে জোরালো আপত্তি জানিয়েছে ।
তারা ইউনিয়ন পরিষদের সাথে থাকার পক্ষেই তাদের মতামত দিয়েছে । বিশেষ করে মৈশাদী ইউনিয়নের অধিকাংশ লোক চাঁদপুর পৌরসভার অর্ন্তভুক্তির না করার দাবী জানান । সেখানে জনগনের উপস্থিতিও ভালো ছিলো । শুধূমাত্র তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের একটি অংশ পৌরসভার সাথে মতামত সাপেক্ষে অর্ন্তভুক্ত করলে ভালো হবে । তবে ভবিষতে জনগনের মতামত সাপেক্ষে পৌরসভায় অর্ন্তভুক্তির বিষয়টি দেখা যাবে ।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, পৌরসভার সাথে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে জনগণের মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হবে । এটা কোন সমস্যা হবে না । সদর ইউএনওকে বিষয়টি আমি বলেছি । চিঠি দেয়া হয়েছে । তিনি গনশুনানী করে জনগনের মতামত নিয়ে রিপোট দিবে ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু এসব ইউনিয়নে ইতোমধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাই এ মুহূর্তে পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত করার সুযোগ নেই বললেই চলে।
: আপডেট ১০:৩৩ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ